২। এ-রাজ্যে কেউ আমাদের মুখ তুলে চায় নি— সন্তানের সেই অনাদর কেবল আমাদের মা'র মনে সয় নি।
৩। দুবেলা মা আমাদের কত যত্ন করে কত খাবার পাঠিয়েছে। সেই মাকে রাখতে পারলুম না রে।
৪। কিন্তু রাজা, তুমি মুখ ফিরিয়ে চলেছ কোথায়? তোমাকে ছাড়ছি নে।
৫। আমরা জোর করে নিয়ে যাব, কেড়ে নিয়ে যাব।
উদয়াদিত্য। আচ্ছা শোন্ আমি বলি— তোরা যদি দেরি না করে এখনই দেশে চলে যাস তাহলে আমি মহারাজের কাছে নিজে মাধবপুরে যাবার দরবার করব।
১। সঙ্গে আমাদের ঠাকুরকেও নিয়ে যাবে?
উদয়াদিত্য। চেষ্টা করব। কিন্তু আর দেরি না— এই মুহূর্তে তোরা এখান থেকে বিদায় হ।
প্রজারা। আচ্ছা আমরা বিদায় হলুম। জয় হোক। তোমার জয় হোক।
রামচন্দ্র গদির উপর তাকিয়া হেলান দিয়া গুড়গুড়ি টানিতে টানিতে
সম্মুখস্থ একজন অপরাধীর বিচার করিতেছেন
রামচন্দ্র। বেটা, তোর এতবড়ো যোগ্যতা!
অপরাধী। ( সরোদনে) দোহাই মহারাজ, আমি এমন কাজ করি নি।
মন্ত্রী। বেটা প্রতাপাদিত্যের সঙ্গে আর আমাদের মহারাজের তুলনা?
দেওয়ান। বেটা, জানিস নে, যখন প্রতাপাদিত্যের বাপ প্রথম রাজা হয় তখন তাকে রাজটিকা পরাবার জন্যে সে আমাদের মহারাজার স্বর্গীয় পিতামহের কাছে আবেদন করে। অনেক কাঁদাকাটা করাতে তিনি তাঁর বাঁ-পায়ের কড়ে আঙুল দিয়ে তাকে টিকা পরিয়ে দেন।
রমাই। বিক্রমাদিত্যের বেটা প্রতাপাদিত্য, ওরা তো দুই পুরুষে রাজা। প্রতাপাদিত্যের পিতামহ ছিল কেঁচো, কেঁচোর পুত্র হল জোঁক, বেটা প্রজার রক্ত খেয়ে খেয়ে বিষম ফুলে উঠল, সেই জোঁকের পুত্র আজ মাথা খুঁড়ে খুঁড়ে মাথাটা কুলোপানা করে তুলেছে আর চক্র ধরতে শিখেছে। আমরা পুরুষানুক্রমে রাজসভায় ভাঁড়বৃত্তি করে আসছি; আমরা বেদে, আমরা জাতসাপ চিনি নে?
রামচন্দ্র। আচ্ছা, যা— এ-যাত্রা বেঁচে গেলি, ভবিষ্যতে সাবধান থাকিস।
[ মন্ত্রী, রমাই ও রামচন্দ্র ব্যতীত সকলের প্রস্থান
রমাই। আপনি তো চলে এলেন, এ দিকে যুবরাজ বাবাজি বিষম গোলে পড়লেন। রাজার অভিপ্রায় ছিল, কন্যাটি বিধবা হলে হাতের লোহা আর বালা দুগাছি বিক্রি করে রাজকোষে কিঞ্চিৎ অর্থাগম হয়। যুবরাজ তাতে ব্যাঘাত করলেন। তা নিয়ে তম্বি কত।
রামচন্দ্র। ( হাসিতে হাসিতে) বটে?