ধনঞ্জয়। না মহারাজ দেব না।
প্রতাপাদিত্য। দেবে না! এতবড়ো আস্পর্ধা।
ধনঞ্জয়। যা তোমার নয় তা তোমাকে দিতে পারব না।
প্রতাপাদিত্য। আমার নয়!
ধনঞ্জয়। আমাদের ক্ষুধার অন্ন তোমার নয়। যিনি আমাদের প্রাণ দিয়েছেন এ অন্ন যে তাঁর, এ আমি তোমাকে দিই কী বলে?
প্রতাপাদিত্য। তুমিই প্রজাদের বারণ করেছ খাজনা দিতে?
ধনঞ্জয়। হাঁ মহারাজ, আমিই তো বারণ করেছি। ওরা মূর্খ, ওরা তো বোঝে না— পেয়াদার ভয়ে সমস্তই দিয়ে ফেলতে চায়। আমিই বলি, আরে আরে এমন কাজ করতে নেই— প্রাণ দিবি তাঁকে প্রাণ দিয়েছেন যিনি। তোদের রাজাকে প্রাণহত্যার অপরাধী করিস নে।
প্রতাপাদিত্য। দেখো ধনঞ্জয়, তোমার কপালে দুঃখ আছে।
ধনঞ্জয়। যে-দুঃখ কপালে ছিল তাকে আমার বুকের উপর বসিয়েছি মহারাজ— সেই দুঃখই তো আমাকে ভুলে থাকতে দেয় না। যেখানে ব্যথা সেইখানেই হাত পড়ে— ব্যথা আমার বেঁচে থাক।
প্রতাপাদিত্য। দেখো বৈরাগী, তোমার চাল নেই -চুলো নেই, কিন্তু এরা সব গৃহস্থমানুষ, এদের কেন বিপদে ফেলতে চাচ্ছ? ( প্রজাদের প্রতি) দেখ্ বেটারা, আমি বলছি তোরা সব মাধবপুরে ফিরে যা। বৈরাগী তুমি এইখানেই রইলে।
প্রজাগণ। আমাদের প্রাণ থাকতে সে তো হবে না।
ধনঞ্জয়। কেন হবে না রে। তোদের বুদ্ধি এখনও হল না? রাজা বললে বৈরাগী তুমি রইলে, তোরা বললি না তা হবে না— আর বৈরাগী লক্ষ্মীছাড়াটা কি ভেসে এসেছে? তার থাকা না-থাকা কেবল রাজা আর তোরা ঠিক করে দিবি?
গান
রইল বলে রাখলে কারে?
হুকুম তোমার ফলবে কবে?
তোমার টানাটানি টিকবে না ভাই,
রবার যেটা সেটাই রবে।
যা খুশি তাই করতে পার-
গায়ের জোরে রাখ মার;
যাঁর গায়ে সব ব্যথা বাজে
তিনি যা সন সেটাই সবে।
অনেক তোমার টাকাকড়ি,
অনেক দড়া অনেক দড়ি,
অনেক অশ্ব অনেক করী—
অনেক তোমার আছে ভবে।
ভাবছ হবে তুমিই যা চাও,
জগৎটাকে তুমিই নাচাও,