গদাই। বিনোদ, তোমার কবিতা যেমন তোমার ব্যবহারটাও তেমনি, একেবারে দুর্বোধ।
বিনোদ। রেগেছ বলেই সহজ কথাটা বুঝতে পারছ না। ভেবে দেখো-না, আমার ছিল এক মামুলি ছাতা, রোদবৃষ্টির দুঃখ ভোগ করতে হয় নি, এমন সময় হিসেবের ভুলে ডেকে আনলুম ছাতার আর-এক শরিক — আজ আমার কাঁধেও জল পড়ছে, তার কাঁধেও। জিনিসটা ঘোরতর অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠেছে।
গদাই। কিন্তু ভুলটা তো তোমারই।
বিনোদ। ভুলটা হচ্ছে ভুল, আর অ-ভুলটা হচ্ছে অ-ভুল, তা সে আমারই হোক আর তোমারই হোক। মোজাটা হচ্ছে মোজা, পাগড়িটা হচ্ছে পাগড়ি। ভুল করে মোজাটাকে যদি পাগড়ি করেই পরি তা হলে আমি ভুল করেছি বলেই মোজাটা কি পাগড়ি হয়ে উঠবে।
গদাই। ( স্বগত) সর্বনাশ! এ আবার হঠাৎ মোজার কথা তোলে কেন? খবর পেয়েছে নাকি? সেদিন যখন মোজাজোড়া মাথায় জড়িয়ে বসেছিলুম হয়তো কোথা দিয়ে দেখে থাকবে। ( প্রকাশ্যে) ওহে মোজা নিয়ে ভুল করলেও তাতে মোজার বুক ফাটে না, বড়োজোর সেলাই ফেঁসে যেতে পারে। কিন্তু মানুষকে নিয়ে ভুল করে তার পরে 'ঐ যাঃ' বলে সরে দাঁড়ালে তো চলে না।
চন্দ্রকান্ত। বকাবকি করে লাভ কি গদাই? এখন বলো বিনোদ, কর্তব্য কী।
বিনোদ। আমি তাঁকে তাঁর বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি।
চন্দ্রকান্ত। তুমি নিজে চেষ্টা করে? না তিনি রাগ করে গেছেন?
বিনোদ। না, আমি তাঁকে একরকম বুঝিয়ে দিলুম —
চন্দ্রকান্ত। যে, এখানে তিনি টিকতে পারবেন না। তুমি সব পার বিনু। আজ আমার মনটা কিছু অস্থির আছে, আজ আর থাকতে পারছি নে।
[ প্রস্থান
কমল। না ভাই ইন্দু, ওরকম করে তুই বলিস নে।
ইন্দু। কিরকম করে বলতে হবে? বলতে হবে, স্ত্রীর ভরটুকুও সইতে পারেন না, বিনোদবিহারী এত বড়োই শৌখিন কবি! তাঁর বড়োজোর সহ্য হয় ফিকে চাঁদের আলো, কিংবা ঝরা ফুলের গন্ধ। আমি ভাবছি তোর মতো মেয়েকেও সইতে পারল না ওর রুচিটি এতই ফিন্ফিনে, আর তুই যে ওর মতো পুরুষকেও সহ্য করতে পারছিস তোর রুচিকে বাহাদুরি দিই।
কমল। তুই বুঝিস নে ইন্দু, ওরা যে পুরুষমানুষ। আমাদের এক ভাব, ওদের আর-এক ভাব। মেয়েমানুষের ভালোবাসা সবুর করতে পারে না, বিধাতা তার হাতে সে অবসর দেন নি। পুরুষ অনেক ঠেকে, অনেক ঘা খেয়ে, তার পরে ভালোবাসতে শেখে ; ততদিনে পৃথিবী সবুর করে থাকে, কাজের ব্যাঘাত হয় না।
ইন্দু। ইস! কী সব নবাব! আচ্ছা দিদি, তুই কি বলিস গদাই গয়্লার সঙ্গে আজই যদি আমার বিয়ে হয় অমনি কাল ভোর থেকেই তাড়াতাড়ি তার চরণদুটো ধরে সেবা করতে বসে যাব — মনে করব, ইনি আমার চিরকালের গয়লা, পূর্বজন্মের গয়লা,