শিবচরণ। সেই ভালো। এই নে, তোকে দেড় টাকা দিচ্ছি — পাকপ্রণালী দু খন্ড কিনে তাকে দিস। এখন গাড়িতে ওঠ্। ( সহিসের প্রতি) দেখ্, একেবারে সেই পটলডাঙার কালেজে নিয়ে যাবি, কোথাও থামাবি নে।
গদাই। ( জনান্তিকে সহিসের প্রতি) মির্জাপুর চন্দ্রবাবুর বাসায় চল্, তোদের একটাকা বকশিশ দেব, ছুটে চল্।
[ প্রস্থান
শিবচরণ। আজ আর রুগি দেখা হল না। আমার সকাল বেলাটা মাটি করে দিলে।
[ প্রস্থান
চন্দ্রকান্ত। নাঃ, এ আগাগোড়া কেবল ছেলেমানুষি করা হয়েছে। আমার এখন অনুতাপ হচ্ছে! মনে হচ্ছে যেন আমিই এ সমস্ত কাণ্ডটি ঘটিয়েছি। ইদিকে এত কল্পনা, এত কবিত্ব, এত মাতামাতি, আর বিয়ের দু দিন না যেতে যেতেই কিছু আর মনে ধরছে না।
গদাইয়ের প্রবেশ
গদাই। কী হচ্ছে চন্দরদা?
চন্দ্রকান্ত। না গদাই, তোরা আর বিয়েথাওয়া করিস নে।
গদাই। কেন বলো দেখি। তোমার ঘাড়ে ম্যাল্থসের ভূত চপল নাকি?
চন্দ্রকান্ত। এখনকার ছেলেরা তোরা মেয়েমানুষকে বিয়ে করবার যোগ্য নোস। তোরা কেবল লম্বাচওড়া কথা কবি আর কবিতা লিখবি, তাতে যে পৃথিবীর কী উপকার হবে ভগবান জানেন।
গদাই। কবিতা লিখে পৃথিবীর কী উপকার হয় বলা শক্ত, কিন্তু এক-এক সময় নিজের কাজে লেগে যায় সন্দেহ নেই। যা হোক, এত রাগ কেন?
চন্দ্রকান্ত। শুনেছ তো সমস্তই! আমাদের বিনুর তাঁর স্ত্রীকে পছন্দ হচ্ছে না।
গদাই। বাস্তবিক, এরকম গুরুতর ব্যাপার নিয়ে খেলা করাটা ভালো হয় নি।
চন্দ্রকান্ত। বিনুটা যে অত অপদার্থ তা কি জানতুম! একটা স্ত্রীলোককে ভালোবাসার ক্ষমতাটুকুও নেই।
গদাই। আমি জানি, কবিতা লেখার চেয়েও সেটা সহজ কাজ।
চন্দ্রকান্ত। আমি ওর মুখদর্শন করছি নে।
গদাই। তুমি তাকে ছাড়লে সে যে নেহাত অধঃপাতে যাবে।
চন্দ্রকান্ত। না, তার সঙ্গে কিছুতেই মিশছি নে, পায়ে এসে ধরে পড়লেও না। তুমি ঠিক বলেছিলে গদাই, আজকাল সবাই যাকে ভালোবাসা বলে সেটা একটা স্নায়ুর ব্যামো — হঠাৎ চিড়িক মেরে আসে, তার পরে ছেড়ে যেতেও তর সয় না।
গদাই। সে-সব বিজ্ঞানশাস্ত্রের কথা পরে হবে, আপাতত আমার একটা কাজ করে দিতে হচ্ছে।