সত্য হোক, স্বপ্ন হোক, এসো স্নেহময়ী
তোমার দক্ষিণ হস্ত ললাটে চিবুকে
রাখো ক্ষণকাল। শুনিয়াছি লোকমুখে
জননীর পরিত্যক্ত আমি। কতবার
হেরেছি নিশীথস্বপ্নে জননী আমার
এসেছেন ধীরে ধীরে দেখিতে আমায়,
কাঁদিয়া কহেছি তাঁরে কাতর ব্যথায়
‘ জননী, গুণ্ঠন খোলো, দেখি তব মুখ ' —
অমনি মিলায় মূর্তি তৃষার্ত উৎসুক
স্বপনেরে ছিন্ন করি। সেই স্বপ্ন আজি
এসেছে কি পাণ্ডবজননীরূপে সাজি
সন্ধ্যাকালে, রণক্ষেত্রে, ভাগীরথীতীরে।
হেরো দেবী, পরপারে পাণ্ডবশিবিরে
জ্বলিয়াছে দীপালোক, এ পারে অদূরে
কৌরবের মন্দুরায় লক্ষ অশ্বখুরে
খর শব্দ উঠিছে বাজিয়া। কালি প্রাতে
আরম্ভ হইবে মহারণ। আজ রাতে
অর্জুনজননীকণ্ঠে কেন শুনিলাম
আমার মাতার স্নেহস্বর। মোর নাম
তাঁর মুখে কেন হেন মধুর সংগীতে
উঠিল বাজিয়া — চিত্ত মোর আচম্বিতে
পঞ্চপাণ্ডবের পানে ‘ ভাই ' ব'লে ধায়।
কুন্তী। তবে চলে আয় বৎস, তবে চলে আয়।
কর্ণ। যাব মাতঃ, চলে যাব, কিছু শুধাব না —
না করি সংশয় কিছু না করি ভাবনা।
দেবী, তুমি মোর মাতা! তোমার আহ্বানে
অন্তরাত্মা জাগিয়াছে — নাহি বাজে কানে
যুদ্ধভেরী, জয়শঙ্খ — মিথ্যা মনে হয়
রণহিংসা, বীরখ্যাতি, জয়পরাজয়।
কোথা যাব, লয়ে চলো।
কুন্তী। ওই পরপারে
যেথা জ্বলিতেছে দীপ স্তব্ধ স্কন্ধাবারে