নীরবে পাঠ
পশ্চাৎ হইতে খাতা অন্বেষণে গদাইয়ের প্রবেশ
কিন্তু ছন্দ থাক্ না-থাক্ পড়তে তো কিছুই খারাপ হয় নি। সত্যি, ছন্দ নেই বলে আরো মনের সরল ভাবটা ঠিক যেন প্রকাশ হয়েছে। আমার বেশ লাগছে। আমার বোধ হয় ছেলেদের প্রথম ভাঙা কথা যেমন মিষ্টি লাগে কবিদের প্রথম ভাঙা ছন্দ তেমনি মিষ্টি। ( খাতা বুকে চাপিয়া) এ খাতা আমি নিয়ে যাব। এ তো আমাকেই লিখেছেন। আমার এমনি আনন্দ হচ্ছে। ( প্রস্থানোদ্যম। পশ্চাতে ফিরিয়া গদাইকে দেখিয়া)ওমা! (মুখ আচ্ছাদন)
গদাই। ঠাকরুন, আমি একখানা খাতা খুঁজতে এসেছিলুম।
জন্ম জন্ম কেবলই আমার খাতাই হারাক। কবিতার বদলে যা পেয়েছি কালিদাস তাঁর কুমারসম্ভব শকুন্তলা বাঁধা রেখে এমন জিনিস পায় না!
[ মহা উল্লাসে প্রস্থান
গদাই। আহা, এই বাড়িটা আমার শরীর থেকে আমার মনটুকুকে যেন শুষে নিচ্ছে, ব্লটিং যেমন কাগজ থেকে কালি শুষে নেয়। কিন্তু কোন্ দিকে সে থাকে এ পর্যন্ত কিছুই সন্ধান করতে পারলুম না। ঐ যে পশ্চিমের জানলার ভিতর দিয়ে একটা সাদা কাপড়ের মতন যেন দেখা গেল না? না, ও তো নয়, ও তো একজন দাসী দেখছি। ও কী করছে? একটা ভিজে শাড়ি শুকুতে দিচ্ছে। বোধ হয় তাঁরই শাড়ি। আহা, নাগাল পেলে একবার স্পর্শ করে নিতুম। তা হলে এতক্ষণে তাঁর সনান হল। পিঠের উপরে ভিজে চুল ফেলে সাফ কাপড়টি পরে এখন কী করছেন!
[ এই বাড়ির চৌকাঠ পার হইতে হুঁচট খাইয়া একজন বুড়ির কক্ষ হইতে তরকারির ঝুড়ি পড়িয়া গেল। ]
গদাই। ( ছুটিয়া নিকটে গিয়া ধরিয়া উঠাইয়া) আহাহাহা, কী তোমার নাম গো?
বুড়ি। আমার নাম ঠাকুরদাসী, এই বাড়ির ঝি।
গদাই। এই বাড়ির ঝি! আহা, লাগে নি তো?
বুড়ি। না, কিছু লাগে নি।
গদাই। আলুগুলো সব যে ছড়িয়ে পড়েছে। রোসো, কুড়িয়ে দিচ্ছি। তুমি বুঝি এই বাড়ির ঝি!
বুড়ি। হাঁ বাবু।
গদাই। চৌধুরীদের বাড়ির ঝি?
বুড়ি। হাঁ গো, গঙ্গামাধব চৌধুরী।
গদাই। আহাহা, ভাঁড়টা উলটে গিয়ে তেল যে সব গড়িয়ে গেছে। তোমার দিদিঠাকরুন হয়তো রাগ করবেন।