ইন্দু। একবার আমাদের হাতে পড়ুক-না, দুটিমাত্র প্রাণীর বিয়ে যে কিরকম ধুন্দুমার ব্যাপার, তা তাঁকে একরকম মোটামুটি বুঝিয়ে দেব। — আজ যে তুমি বাইরের ঘরে?
ক্ষান্তমণি। এই ঘরে সব বরযাত্রী জুটবে। দেখ্-না ভাই, ঘরের অবস্থাখানা। তারা আসবার আগে একটুখানি গুছিয়ে নেবার চেষ্টায় আছি।
ইন্দু। তোমার একলার কর্ম নয়, এসো ভাই, দুজনে এ জঞ্জাল সাফ করা যাক। এগুলো দরকারি নাকি?
ক্ষান্তমণি। কিচ্ছু না। যত রাজ্যির পুরোনো খবরের কাগজ জুটেছে। কাগজগুলো যেখানে পড়া হয়ে যায় সেইখানেই পড়ে থাকে।
ইন্দু। এগুলো?
ক্ষান্তমণি। এগুলো মকদ্দমার কাগজ — হারাতে পারলে বাঁচেন বোধ হয়। কেন যে হারায় না তাও তো বুঝতে পারি নে। কতকগুলো গদির নীচে গোঁজা, কতক আলমারির মাথায়, কতক ময়লা চাপকানের পকেটে। যখন কোনোটার দরকার পড়ে বাড়ি মাথায় করে বেড়ান, আস্তাকুঁড় থেকে আর বাড়ির ছাত পর্যন্ত এমন যায়গা নেই যেখানে না খুঁজতে হয়।
ইন্দু। এর সঙ্গে যে ইংরেজি নভেলও আছে — তারও আবার পাতা ছেঁড়া! কতকগুলি চিঠি — এ কি দরকারি!
ক্ষান্তমণি। ওর মধ্যে দরকারি আছে অ-দরকারিও আছে, কিচ্ছু বলবার জো নেই। খুব গোপনীয়ও আছে, সেগুলো চারি দিকে ছড়ানো। খুব বেশি দরকারি চিঠি সাবধান করে রাখবার জন্যে বইয়ের মধ্যে গুঁজে রাখা হয়, সে আর কিছুতেই খুঁজে পাওয়া যায় না।
ইন্দু। এ-সব কী। কতকগুলো লেখা, কতকগুলো প্রুফ, খালি দেশলাইয়ের বাক্স, কাননকুসুমিকা, কাগজের পুঁটুলির মধ্যে ছাতাধরা মসলা, একখানা তোয়ালে, গোটাকতক দাবার ঘুঁটি, একটি ইস্কাবনের গোলাম, ছাতার বাঁট — এ চাবির গোছা ফেলে দিলে বোধ হয় চলবে না?
ক্ষান্তমণি। এই দেখো! এই চাবির মধ্যে ওঁর যথাসর্বস্ব। আজ সকালে একবার খোঁজ পড়েছিল, কোথাও সন্ধান না পেয়ে শেষে উমাপতিদের বাড়ি থেকে সতেরোটা টাকা ধার করে নিয়ে এলেন। দাও তো ভাই, এ চাবি ওঁকে সহজে দেওয়া হবে না। ঐ ভাই, ওরা আসছে, চলো ও ঘরে পালাই।
[ প্রস্থান
বিনোদ চন্দ্রকান্ত গদাই নলিনাক্ষ শ্রীপতি ভূপতির প্রবেশ
বিনোদ। ( টোপর পরিয়া) সঙ তো সাজলাম, এখন তোমরা পাঁচ জনে মিলে হাততালি দাও — উৎসাহ হোক, মনটা দমে যাচ্ছে।
চন্দ্রকান্ত। এরই মধ্যে? এখনো তো রঙ্গমঞ্চ চড় নি?
বিনোদ। আচ্ছা চন্দর, অভিনয়ে আমার পার্ট কী হবে বুঝিয়ে দাও দেখি।
চন্দ্রকান্ত। মহারাণীর বিদূষক।
বিনোদ। সাজটিও যথোপযুক্ত হয়েছে। ইংরেজ রাজাদের যে ফুল্গুলো ছিল তাদেরও টুপিটা এই টোপরের মতো।