Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (http://rabindra-rachanabali.nltr.org)


কাহিনী - নরকবাস, ৪৬
কাহিনী

সহাস্য শিশুরে। পায়ে পড়ি দেবীগণ

পথ রুধি আর্তকণ্ঠে করিল ক্রন্দন —

আমি চলে এনু বেগে। বহ্নি উঠে জ্বলি —

দাঁড়ায়ে রয়েছে রাজা পাষাণপুত্তলি।

কম্পিত প্রদীপ্ত শিখা হেরি হর্ষভরে

কলহাস্যে নৃত্য করি প্রসারিত করে

ঝাঁপাইতে চাহে শিশু। অন্তঃপুর হতে

শতকণ্ঠে উঠে আর্তস্বর। রাজপথে

অভিশাপ উচ্চারিয়া যায় বিপ্রগণ

নগর ছাড়িয়া। কহিলাম, ‘ হে রাজন,

আমি করি মন্ত্রপাঠ, তুমি এরে লও,

দাও অগ্নিদেবে। '

সোমক।              ক্ষান্ত হও, ক্ষান্ত হও,

কহিয়ো না আর।

প্রেতগণ।             থামো থামো! ধিক্‌ ধিক্‌!

পূর্ণ মোরা বহু পাপে, কিন্তু রে ঋত্বিক্‌,

শুধু একা তোর তরে একটি নরক

কেন সৃজে নাই বিধি! খুঁজে যমলোক

তব সহবাসযোগ্য নাহি মিলে পাপী।

দেবদূত।    মহারাজ, এ নরকে ক্ষণকাল যাপি

নিষ্পাপে সহিছ কেন পাপীর যন্ত্রণা?

উঠ স্বর্গরথে — থাক্‌ বৃথা আলোচনা

নিদারুণ ঘটনার।

সোমক।                    রথ যাও লয়ে

দেবদূত! নাহি যাব বৈকুণ্ঠ-আলয়ে।

তব সাথে মোর গতি নরকমাঝারে

হে ব্রাহ্মণ! মত্ত হয়ে ক্ষাত্র-অহংকারে

নিজ কর্তব্যের ত্রুটি করিতে ক্ষালন

নিষ্পাপ শিশুরে মোর করেছি অর্পণ

হুতাশনে, পিতা হয়ে। বীর্য আপনার

নিন্দুকসমাজমাঝে করিতে প্রচার

নরধর্ম রাজধর্ম পিতৃধর্ম হায়