কানাই। আপনার ছেলেটি কী করেন?
পরেশ। ওকে নিজেই পড়াচ্ছিলুম। হ্রস্ব ই পর্যন্ত সেরে দীর্ঘ ঈতে এমনি আটকে পড়ল যে ভাবলুম, দৌলদ্দা যখন আছেন তখন ছেলের লেখাপড়ার দরকার কী? যে বেটার হ্রস্ব-দীর্ঘ জ্ঞান নেই তার পক্ষে বাবা-জ্যাঠা দুই সমান। কেমন কি না?
কানাই। সমান বৈকি।
পরেশ। দাদা বলেছেন, নিজের ক্ষুধা হেয় জ্ঞান করে পরের ক্ষুধানিবৃত্তির সুখ একমাত্র একান্নবর্তী পরিবারেই সম্ভব। শুনেই ঠাওরালুম, এ সুখ দাদা নিশ্চয়ই অনেক দিন পান নি। যদি বা পেয়ে থাকেন বিস্মৃত হয়েছেন। তাই নিতান্ত মমতাপরবশ হয়ে ছেলেটিকে এখানে নিয়ে এলুম। রাবণের চুলো যদি কোথাও জ্বলে সে এর পেটের মধ্যে।
নটবরের প্রবেশ
নটবর। ( দৌলতের কান মলিয়া) কী রে শালা! শুনলুম না কি শালার শোকে সভায় দাঁড়িয়ে কেঁদে ভাসিয়ে দিয়েছিস?
দৌলত। কে হে তুমি বেল্লিক! ভদ্রলোকের কানে হাত দাও!
নটবর। ভগ্নীপতির কান মলব না তো কি কান ভাড়া করে এনে মলব! কী বলেন মশায়?
কানাই। কথাটা তো ঠিক বটে।
দৌলত। কী বল হে কানাই! আমার স্ত্রীই নেই, তো আবার শালা কিসের?
নটবর। তোমারই যেন স্ত্রী নেই, তাই বলে আর কারো স্ত্রী নেই? একটু ভেবে দেখো-না।
দৌলত। স্ত্রী তো অনেকেরই আছে, তা আর ভাবতে হবে কী!
নটবর। ( হাসিয়া) তবে?
দৌলত। ( সরোষে) তবে কী! তুমি আমার শালা কোন্ সম্পর্কে?
নটবর। কেন, দাদার সম্পর্কে। দাদা আছেন তো! শালাই যেন ভাঁড়ালে, কিন্তু দাদা বেকবুল গেলে তো চলবে না!
দৌলত। আমি তো জানতেম নেই, কিন্তু আজ যেরকম দেখছি তাতে-
নটবর। থাক্, তা হলেই তো চুকে গেল। বেশি বকাবকিতে কাজ কী? ভদ্রলোক বসে আছেন, এঁর সামনে কে শালা আর কে শালা নয় তা নিয়ে তক্রার করা ভালো দেখায় না। ( দৌলতের পশ্চাৎ হইতে তাকিয়া টানিয়া লইয়া) একটু জিরোনো যাক, এক ছিলিম তামাক ডাকো।
ফলমূলমিষ্টান্ন লইয়া ভৃত্যের প্রবেশ
ভৃত্য। ( দৌলতকে) আপনার জলখাবার।
দৌলত। ( সরোষে) বেটা, তোকে এখানে কে খাবার আনতে বলেছে? বাড়ি-ভিতর নিয়ে যা!
পরেশ। বিলক্ষণ, তাতে দোষ হয়েছে কী! (ভৃত্যের প্রতি) ওরে তুই দিয়ে যা, এ দিকে দিয়ে যা।
থালা লইয়া আহার-আরম্ভ
চুলের মুঠি ধরিয়া বিধুভূষণকে লইয়া দুই স্ত্রীলোকের প্রবেশ
প্রথমা। পোড়ারমুখো তোমার মরণ হয় না!
দৌলত। ( শশব্যস্তে) এঁরা কে?
জয়নারায়ণ। বাবা, ব্যস্ত হোয়ো না, আমার সেই খুড়তুত ভাই এসে পৌঁচেছেন।
প্রথমা। ও আবাগের বেটা ভূত!