Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (http://rabindra-rachanabali.nltr.org)


কাহিনী - নরকবাস, ৪১
কাহিনী
নরকবাস

নেপথ্যে।   কোথা যাও মহারাজ!

সোমক।                   কে ডাকে আমারে

দেবদূত? মেঘলোকে ঘন অন্ধকারে

দেখিতে না পাই কিছু — হেথা ক্ষণকাল

রাখো তব স্বর্গরথ।

নেপথ্যে।                  ওগো নরপাল,

নেমে এসো। নেমে এসো হে স্বর্গপথিক!

সোমক।     কে তুমি, কোথায় আছ?

                  নেপথ্যে আমি সে ঋত্বিক্‌,

মর্তে তব ছিনু পুরোহিত।

সোমক।                          ভগবন্‌,

নিখিলের অশ্রু যেন করেছে সৃজন

বাষ্প হয়ে এই মহা অন্ধকারলোক,

সূর্যচন্দ্রতারাহীন ঘনীভূত শোক

নিঃশব্দে রয়েছে চাপি দুঃস্বপ্ন-মতন

নভস্তল,— হেথা কেন তব আগমন?

প্রেতগণ।    স্বর্গের পথের পার্শ্বে এ বিষাদলোক,

এ নরকপুরী। নিত্য নন্দন-আলোক

দূর হতে দেখা যায় — স্বর্গযাত্রিগণে

অহোরাত্রি চলিয়াছে, রথচক্রস্বনে

নিদ্রাতন্দ্রা দূর করি ঈর্ষাজর্জরিত

আমাদের নেত্র হতে। নিম্নে মর্মরিত

ধরণীর বনভূমি, সপ্ত পারাবার

চিরদিন করে গান — কলধ্বনি তার

হেথা হতে শুনা যায়।

ঋত্বিক্‌।                   মহারাজ, নামো

তব দেবরথ হতে।

প্রেতগণ।                 ক্ষণকাল থামো

আমাদের মাঝখানে। ক্ষুদ্র এ প্রার্থনা

হতভাগ্যদের। পৃথিবীর অশ্রুকণা