কাঙালি। মশায়কে ও-দুটোর কোনোটাই করতে হবে না। ( খাতা অগ্রসর করিয়া ) কেবল কিঞ্চিৎ চাঁদা-
দুকড়ি। ( ধরফর করিয়া উঠিয়া) চাঁদা! আ সর্বনাশ! তুমি তো সহজ লোক নও হে! ভালোমানুষটির মতো মুখ কাঁচুমাচু করে এসেছ — আমি বলি, বুঝি কী মকদ্দমার ফেসাদে পড়েছ। তোমার চাঁদার খাতা নিয়ে বেরোও এখনি, নইলে ট্রেস্পাসের দাবি দিয়ে পুলিস-কেস আনব।
কাঙালি। চাইলুম চাঁদা, পেলুম অর্ধচন্দ্র! (স্বগত) কিন্তু তোমাকে জব্দ করব।
দুকড়ি। এ তো বড়ো মজাই হল! কাঙালিচরণ বলে কে একজন লোক ইংরেজি বাংলা সমস্ত খবরের কাগজে লিখে পাঠিয়েছে যে আমি তাদের ‘ গানোন্নতিবিধায়িনী ' সভায় পাঁচ হাজার টাকা দান করেছি। দান চুলোয় যাক, গলাধাক্কা দিতে বাকি রেখেছি। মাঝের থেকে আমার খুব নাম রটে গেল — এতে আমার ব্যাবসার পক্ষে ভারি সুবিধে। তাদেরও সুবিধে ; লোক মনে করবে, যখন পাঁচ হাজার টাকা দান পেয়েছে তখন অবিশ্যি মস্ত সভা। পাঁচ জায়গা থেকে ভারী ভারী চাঁদা আদায় হবে। যা হোক, আমার অদৃষ্ট ভালো।
কেরানিবাবুর প্রবেশ
কেরানি। মশায় তবে গানোন্নতিসভায় পাঁচ হাজার টাকা দান করেছেন?
দুকড়ি। ( মাথা চুলকাইয়া হাসিয়া) আ — ও একটা কথার কথা। শোন কেন! কে বললে দিয়েছি? মনে করো যদি দিয়েই থাকি, তা হয়েছি কী? এত গোলের আবশ্যক কী?
কেরানি। আহা, কী বিনয়! পাঁচ হাজার টাকা নগদ দিয়ে গোপন করবার চেষ্টা, সাধারণ লোকের কাজ নয়।
ভৃত্যের প্রবেশ
ভৃত্য। নীচের ঘরে বিস্তর লোক জমা হয়েছে।
দুকড়ি। ( স্বগত) দেখেছ! একদিনেই আমার পসার বেড়ে গেছে। ( সানন্দে) একে একে তাদের উপরে নিয়ে আয় — আর পান-তামাক দিয়ে যা।
প্রথম ব্যক্তির প্রবেশ
দুকড়ি। ( চৌকি সরাইয়া) আসুন — বসুন। মশায়, তামাক ইচ্ছে করুন। ওরে — পান দিয়ে যা।
প্রথম। ( স্বগত) আহা, কী অমায়িক প্রকৃতি! এঁর কাছে কামনাসিদ্ধি হবে না তো কার কাছে হবে!
দুকড়ি। মশায়ের কী অভিপ্রায়ে আগমন?
প্রথম। আপনার বদান্যতা দেশবিখ্যাত।
দুকড়ি। ও-সব গুজবের কথা শোনেন কেন?
প্রথম। কী বিনয়! কেবল মশায়ের নামই শ্রুত ছিলুম, আজ চক্ষুকর্ণের বিবাদভঞ্জন হল।
দুকড়ি। ( স্বগত) এখন আসল কথাটা যে পাড়লে হয়। বিস্তর লোক বসে আছে। (প্রকাশ্যে) তা, মশায়ের কী আবশ্যক?