কুঞ্জবিহারী। কী অভিপ্রায়ে আগমন?
বশম্বদ। আজ্ঞে, আর তো অন্ন জোটে না ; মশায় সেই-যে কাজের-
কুঞ্জবিহারী। ( ব্যস্তসমস্ত হইয়া) কাজ? কাজ আবার কিসের? আজ এই সুমধুর শরৎকালে কাজের কথা কে বলে?
বশম্বদ। আজ্ঞে, ইচ্ছে করে কেউ বলে না, পেটের জ্বালায়-
কুঞ্জবিহারী। পেটের জ্বালা? ছিছি, ওটা অতি হীন কথা — ও কথা আর বলবেন না।
বশম্বদ। যে আজ্ঞে, আর বলব না। কিন্তু ওটা সর্বদাই মনে পড়ে।
কুঞ্জবিহারী। বলেন কী বশম্বদবাবু, সর্বদাই মনে পড়ে? এমন প্রশান্ত নিস্তব্ধ সুন্দর সন্ধ্যাবেলাতেও মনে পড়ছে?
বশম্বদ। আজ্ঞে, পড়ছে বৈকি। এখন আরো বেশি মনে পড়ছে। সেই সাড়েদশটা বেলায় দুটি ভাত মুখে গুঁজে উমেদারি করতে বের হয়েছিলুম, তার পরে তো আর খাওয়া হয় নি।
কুঞ্জবিহারী। তা না'ই হল। খাওয়া না'ই হল।
বশম্বদবাবুর নীরবে মাথা-চুলকন
এই শরতের জ্যোৎ সনায় কি মনে হয় না যে, মানুষ যেন পশুর মতো কতকগুলো আহার না করেও বেঁচে থাকে! যেন কেবল এই চাঁদের আলো, ফুলের মধু, বসন্তের বাতাস খেয়েই জীবন বেশ চলে যায়!
বশম্বদ। ( সভয়ে মৃদুস্বরে) আজ্ঞে, জীবন বেশ চলে যায় সত্যি, কিন্তু জীবন রক্ষে হয় না — আরো কিছু খাবার আবশ্যক করে।
কুঞ্জবিহারী। ( উষ্ণভাবে) তবে তাই খাও গে যাও। কেবল মুঠো মুঠো কতকগুলো ভাত ডাল আর চচ্চড়ি গেলো গে যাও। এখানে তোমাদের অনধিকার প্রবেশ।
বশম্বদ। সেগুলো কোথায় পাওয়া যাবে মশায়! আমি এখনই যাচ্ছি। ( কুঞ্জবাবুকে অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হইতে দেখিয়া) কুঞ্জবাবু আপনি ঠিক বলেছেন, আপনার এই বাগানের হাওয়া খেলেই পেট ভরে যায়। আর কিছু খেতে ইচ্ছে করে না।
কুঞ্জবিহারী। এ কথা আপনার মুখে শুনে খুশি হলুম, এই হচ্ছে যথার্থ মানুষের মতো কথা। চলুন, বাইরে চলুন ; এমন বাগান থাকতে ঘরে কেন?
বশম্বদ। চলুন। ( আপন মনে মৃদুস্বরে) হিমের সময়টা — গায়েও একখানা কাপড় নেই-
কুঞ্জবিহারী। বা — শরৎ কালের কী মাধুরী!
বশম্বদ। তা ঠিক কথা। কিন্তু কিছু ঠাণ্ডা।
কুঞ্জবিহারী। ( গায়ে শাল টানিয়া ) কিছুমাত্র ঠাণ্ডা নয়।
বশম্বদ। না, ঠাণ্ডা নয়। ( হিহিহি কম্পন)
কুঞ্জবিহারী। ( আকাশে চাহিয়া) বা বা বা — দেখে চক্ষু জুড়োয়। খণ্ড খণ্ড সাদা মেঘগুলি নীল আকাশ - সরোবরে রাজহংসের মতো ভেসে বেড়াচ্ছে, আর মাঝখানে চাঁদ যেন-