হারাধন। বাবা! ডাক্তার-সাহেবের আস্তাবল থেকে হাঁসের ডিম চুরি করতে গিয়ে আজ আচ্ছা নাকাল হয়েছি! সাহেব যেরকম তাড়া করে এসেছিল, মরেছিলেম আর-কি! ভয়ে পালাতে গিয়ে খানার মধ্যে পড়ে গিয়েছিলেম। পা ভেঙে গেছে — তাতে দুঃখ নেই, প্রাণ নিয়ে পালিয়ে এসেছি এই ঢের। রোগীগুলোকে হাতে পেলে ডাক্তার-সাহেব পট্ পট্ করে মেরে ফেলে ; আমার কোনো ব্যামোস্যামো নেই, আমাকেই তো সেরে ফেলবার জো করেছিল। এবারে রোজ রোজ আর হাঁসের ডিম চুরি করব না ; একেবারে আস্ত হাঁস চুরি করব, আমাদের বাড়িতে ডিম পাড়বে।
নেপথ্য হইতে। হারু!
হারাধন। ( সভয়ে) ঐ রে, বাবা এসেছে। আমার একটা পা খোঁড়া দেখলে মারের চোটে বাবা আর-একটা পা খোঁড়া করে দেবে।
নেপথ্যে পুনশ্চ। হারু! (নিরুত্তর) হারা! (নিরুত্তর) হেরো!
পিতার প্রবেশ
হারাধন। ( অগ্রসর হইয়া) আজ্ঞে!
পিতা। তুই খোঁড়াচ্ছিস যে!
হারাধনের মাথা-চুলকন
পিতা। ( সরোষে) পা ভাঙলি কী করে!
হারাধন। ( সভয়ে ) আজ্ঞে, আমি ইচ্ছে করে ভাঙি নি।
পিতা। তা তো জানি, কী করে ভাঙল সেইটে বল্-না।
হারাধন। জানি নে বাবা!
পিতা। তোর পা ভাঙল তুই জানিস নে তো কি ও পাড়ার গোবরা তেলি জানে?
হারাধন। কখন ভাঙল টের পাই নি বাবা!
পিতা। বটে! এই লাঠির বাড়ি তোর মাথাটা ভাঙলে তবে টের পাবি বুঝি!
হারাধন। ( তাড়াতাড়ি হাত দিয়া মাথা আড়াল করিয়া) না বাবা! ঐ মাথাটা বাঁচাতে গিয়েই পা'টা ভেঙেছি।
পিতা। বুঝেছি। তবে বুঝি সেদিনকার মতো ডাক্তার-সাহেবের বাড়িতে হাঁসের ডিম চুরি করতে গিয়েছিলি, তাই তারা মেরে তোর পা ভেঙে দিয়েছে।
হারাধন। ( চোখ রগড়াইতে রগড়াইতে) হাঁ বাবা! আমার কোনো দোষ নেই। পা আমি নিজে ভাঙি নি, পা তারাই ভেঙে দিয়েছে।
পিতা। লক্ষ্মীছাড়া, তোর কি কিছুতেই চৈতন্য হবে না?
হারাধন। চৈতন্য কাকে বলে বাবা?