চন্দ্রকান্ত। যেন আষাঢ়-সন্ধ্যাবেলায় জুঁইগাছের গাঁঠে গাঁঠে কুঁড়ি ধরল বলে, আর দেরি নেই।
বিনোদ। আরো কিছু আছে?
চন্দ্রকান্ত। যেন —
নব জলধরে বিজুরী-রেহা
দ্বন্দ্ব পসারি গেলি।
বিনোদ। থামলে কেন, বলে যাও।
চন্দ্রকান্ত। যেন বাঁশিটি আজ ঠেকেছে এসে গুণীর অধরে। সত্যি করে বল্ ভাই, লুকোস্ নে আমার কাছে।
বিনোদ। তা হতে পারে। একটা কোন্ ইশারা আজ গোধূলিতে উড়ে বেড়াচ্ছে, তাকে কিছুতে ধরতে পারছি নে।
চন্দ্রকান্ত। ইশারা উড়ে বেড়াচ্ছে! সেটা প্রজাপতির ডানায় নাকি?
বিনোদ। যেন অন্ধ মৌমাছির কাছে রজনীগন্ধার গন্ধের ইশারা।
চন্দ্রকান্ত। হায় হায়, হাওয়াটা কোন্ দিক থেকে বইছে, তার ঠিকানাই পেলে না?
বিনোদ। পোস্ট-আপিসের ঠিকানাটা পাওয়া শক্ত নয় চন্দরদা! কিন্তু স্বর্ণরেণু কোথায় আছে লুকিয়ে সেই ঠিকানাটাই-
চন্দ্রকান্ত। সর্বনাশ করলে! এরই মধ্যে স্বর্ণের কথাটা মনে এসেছে? সাদা ভাষায় ওর মানে হচ্ছে পণের টাকা — তোমার রজনীগন্ধার গন্ধটা তা হলে ব্যাঙ্কশাল স্ট্রীটের দিক থেকেই এল বুঝি?
বিনোদ। ছি ছি চন্দ্র, এমন কথাটাও তোমার মুখ দিয়ে বেরোল! আমি তুচ্ছ টাকার কথাই কি ভাবছি?
চন্দ্রকান্ত। আজকালকার দিনে কোন্টা তুচ্ছ, কন্যাটা না পণটা, তার হিসেব করা শক্ত নয়। যুবকরা তো সোনার মৃগ দেখেই ছোটে, সীতা পড়ে থাকেন পশ্চাতে।
বিনোদ। যুবক যে কে, সে কি তার বয়স গুণে বের করতে হবে, আর সোনার রেণু যে কাকে বলে সে কি বুঝবে তার ভরি ওজন করে?
চন্দ্রকান্ত। এটা বেশ বলেছ, তোমার কবিতায় লিখে ফেলো হে, কথাটা আজ বাদে কাল হারিয়ে না যায়। আমার একটা লাইন মনে এল, তুমি কবি, তার পাদপূরণ করে দাও দেখি —
ও ভোলা মন, বল্ দেখি ভাই,
কোন্ সোনা তোর সোনা।
বিনোদ।
কেনাবেচার দেনালেনায়
যায় না তারে গোনা।
চন্দ্রকান্ত। ভ্যালা মোর দাদা! আচ্ছা, আর-এক লাইন —
ও ভোলা মন, বল্ সে সোনা
কেমন করে গলে।