ইন্দু। অর্থাৎ, আমাদের চন্দ্রের যা কলঙ্ক সেটা কেবল মুখের উপরে, তার জ্যোৎস্নায় কোনো দাগ পড়ে না। তোমাদের লক্ষ্মীছাড়া দলে আর কে আছে নাম করো দেখি।
ক্ষান্তমণি। আর-একজন আছে, তার নাম গদাই।
ইন্দু। আরে, ছি ছি, ছি ছি! অমন নাম যার তার খড়্খড়ে চিরদিন যেন বোজা থাকে।
ক্ষান্তমণি। নাম শুনেই যে তোর —
ইন্দু। নামের দাম কম নয় দিদি। ভেবে দেখো তো, দৈবদুর্যোগে গদাই যদি ‘ কাননকুসুমিকা ' র কবি হত তা হলে কবির নাম জপ করবার সময় দিদি কী মুশকিলেই পড়ত। ভক্তি হত না, সুতরাং মুক্তিও পেত না।
কমল। দিদির মুক্তির জন্যে তোমাকে অত ভাবতে হবে না। এখন নিজের কথা চিন্তা করবার সময় হয়েছে।
ইন্দু। সেইজন্যেই তো নাম বাছাই করতে লেগে গেছি। সময় নষ্ট করতে চাই নে। আমার স্বয়ম্বর সভার নিমন্ত্রণের ফর্দ থেকে গদাই নামটা কাটা পড়ল।
কমল। তা হলে এইবেলা তোমার পছন্দসই নামের একটা ফর্দ করা যাক। কুমুদ কিরকম?
ইন্দু। চলে যায়।
কমল। নিকুঞ্জ?
ইন্দু। চলতেও পারে, কিন্তু উপবাসের মুখে, অর্থাৎ দ্বাদশী তিথিতে।
কমল। পরিমল?
ইন্দু। মালাবদলের সময় নাম-বদল করতে হবে, সে হবে ইন্দু আমি হব পরিমল। যা হোক এগুলো চলতেও পারে — কিন্তু গদাই? নৈব নৈব চ।
ক্ষান্ত। কী যে পাগলামি করছিস ইন্দু! চল্, আমার কাজ আছে।
চন্দ্র। ভাই বিন্দা, তোমাকে দেখে বোধ হচ্ছে, আজ তোমার ভালোমন্দ একটাকিছু হল বলে, কিংবা হয়েই বসেছে।
বিনোদ। তাই নাকি?
চন্দ্রকান্ত। আজ তোমার দৃষ্টিটা ছুটেছে যেন কোন্ মায়ামৃগীর পিছু পিছু। গেছে তার পথ হারিয়ে! ওহে, আজকের হাওয়ায় তোমার গায়ে কারো ছোঁয়াচ লাগছে নাকি?
বিনোদ। কিসে ঠাওরালে?
চন্দ্রকান্ত। মুখের ভাবে।
বিনোদ। ভাবটা কিরকম দেখছ?
চন্দ্রকান্ত। যেন ইন্দ্রধনু উঠেছে আকাশে, আর তারই ছায়াটা শিউরে উঠছে নদীর ঢেউয়ে।
বিনোদ। বলে যাও।