ইন্দু। কবির হৃদয়টা দরাজ, বড়ো বোনের পাকা হাত আর ছোটো বোনের কাঁচা হাত কারও লক্ষ্যই ফসকায় না।
ক্ষান্তমণি। তা যেন হল, তার পরে অংশ নিয়ে তোদের মামলা বাধবে না?
ইন্দু। তাই তো বলে রেখেছি, আমি দাবি করব না।
কমল। এত নিঃস্বার্থ হবার দরকার কী?
ইন্দু। কমলদিদি, জীবনের অঙ্কশাস্ত্রে পুরুষরা আছে গুণের কোঠায়, মেয়েরা ভাগের কোঠায়। ওদের বেলায় দুইয়ের দ্বারা হয় দ্বিগুণ, আমাদের বেলায় দুইয়ের দ্বারা হয় দুভাগ। তাই তোমাকে রাস্তা ছেড়ে দিয়েছি — নইলে দুই বোনে মিলে ঐ খড়্খড়েটার কব্জা এতদিনে ঝর্ঝরে করে দিতুম।
কমল। কেন, রাস্তা কি আমি ছাড়তে জানি নে?
ইন্দু। আমি ওর কবিতাবিছানো রাস্তায় এক পা চলতে পারব না। মানেই বুঝতে পারি নে — হুঁচট খেয়ে মরব।
ক্ষান্তমণি। তোরা দুজনে মিলে রফানিষ্পত্তি করে নে, আমার কাজ আছে, যাই।
ইন্দু। বেলা গিয়েছে, এখন আবার তোমার কাজ?
ক্ষান্তমণি। যত বেকারের দল, কখন কী খেয়াল যায় তার ঠিক নেই। হয়তো হঠাৎ হুকুম হবে, তপ্সি মাছ ভাজা চাই ; নয়তো কড়াইশুটির কচুরি, নয়তো হাঁসের ডিমের বড়া।
ইন্দু। একটু দাঁড়াও, আমরাও যাচ্ছি। তোমার সঙ্গে কর্মবিভাগ করে নেব। আমরা লাগব চেখে দেখবার কঠিন কাজে। কমলদিদি, ঐ দেখো, খড়্খড়েটা লুব্ধ চকোরের চঞ্চুর মতো এখনো হাঁ করে রয়েছে। দেখে দুঃখ হচ্ছে।
কমল। এত দয়া যদি তো সুধা তুমিই ঢালো-না। আমি চললুম।
ইন্দু। না, দিদি।
গান
যাবার বেলা শেষ কথাটি যাও বলে,
কোন্খানে যে মন লুকানো দাও বলে।
চপল লীলা ছলনাভরে
বেদনখানি আড়াল করে,
যে বাণী তব হয় নি বলা নাও বলে।
হাসির বাণে হেনেছ কত শ্লেষকথা,
নয়নজলে ভরো গো আজি শেষকথা
হায় রে অভিমানিনী নারী,
বিরহ হল দ্বিগুণ ভারী
দানের ডালি ফিরায়ে নিতে চাও বলে।
আচ্ছা ভাই, ক্ষান্তদিদি, ঐ খড়্খড়ের পিছনে কোন্ মানুষটি বসে আছে আন্দাজ করো দেখি। চন্দরবাবু?
ক্ষান্তমণি। না, ভাই, তার আর যাই দোষ থাক তোদের শব্দভেদী বাণ তাকে পৌঁছয় না, সে আমি খুব দেখে নিয়েছি।