ক্ষান্তমণি। ইন্দু, তুই স্বপ্ন দেখছিস নাকি?
ইন্দু। ঐ দেখো-না, তোমাদের বন্ধ দরজার খড়্খড়ে খুলে গেছে।
ক্ষান্তমণি। তা তো দেখছি।
ইন্দু। কমলদিদি, বুঝতে পেরেছ?
কমল। আঃ, কী যে বকিস তার ঠিক নেই।
ইন্দু। ঐ খোলা খড়্খড়ির ফাঁক দিয়ে কবিকুঞ্জবনের দীর্ঘনিশ্বাস উচ্ছ্বসিত। ঐ খড়্খড়ির পিছনে একটা ধড়্ফড়ানি দেখতে পাচ্ছ?
কমল। কিসের ধড়্ফড়ানি?
ইন্দু। সেই খবরটাই তো চোখের আড়ালে রয়ে গেল।
গান
হায় রে,
ওরে যায় না কি জানা!
নয়ন ওরে খুঁজে বেড়ায়,
পায় না ঠিকানা।
অলখ পথেই যাওয়া-আসা,
শুনি চরণধ্বনির ভাষা,
গন্ধে শুধু হাওয়ায় হাওয়ায়
রইল নিশানা।
কেমন ক'রে জানাই তারে,
বসে আছি পথের ধারে।
প্রাণে এল সন্ধ্যাবেলা
আলোয় ছায়ায় রঙিন খেলা,
ঝ'রে-পড়া বকুলদলে
বিছায় বিছানা।
ক্ষান্তমণি। ওলো ইন্দু, দেখ্ দেখ্ খড়্খড়ে আরো ফাঁক হয়ে উঠল যে!
ইন্দু। এবার তুমি যদি গান ধর তা হলে দেয়ালসুদ্ধ ফাঁক হয়ে যাবে!
ক্ষান্তমণি। আর ঠাট্টা করতে হবে না, যাঃ। তোর কথা শুনে ভেবেছিলুম, একা কমলই বুঝি শব্দভেদী বাণের তীরন্দাজ। বিধাতা কি তোদের সকলেরই গলায় বাণ বোঝাই করেছেন! হাতের কাছে এত বিপদ জমা আছে, এ তো জানতুম না।
ইন্দু। সৃষ্টিকর্তা সংকল্প করেছেন পুরুষমেধ যজ্ঞ করতে — তারই সহায়তায় নারীদের ডাক পড়েছে। সবাই ছুটে আসছে, কেউ কণ্ঠ নিয়ে, কেউ কটাক্ষ নিয়ে ; কারও বা কুটিল হাস্য, কারো বা কুঞ্চিত কেশকলাপ ; কারো বা সর্ষের তেল ও লঙ্কার বাটনাযোগে বুক-জ্বালানি রান্না।
ক্ষান্তমণি। কিন্তু তোদের সব বাণই কি একটা খড়্খড়ে দিয়ে গলবে নাকি?