ক্ষান্তমণি। কী আর বলব আমি তোকে, আমার তো হাড় জ্বালাতন। আমার ঘরে যতগুলো লোক জোটে সবচেয়ে লক্ষ্মীছাড়া হচ্ছে ঐ বিনোদ।
ইন্দু। সেইজন্যেই লক্ষ্মীদের মহলে সবচেয়ে তার পসর ভারী — লক্ষ্মী যে ছাড়ে লক্ষ্মী তারই পিছনে পিছনে ছোটে।
ক্ষান্তমণি। কেন ভাই, তোর ওকে পছন্দ নাকি?
ইন্দু। আরেকটু হলেই হতে পারত। কিন্তু সে ফাঁড়া কেটে গেছে।
ক্ষান্তমণি। কী ক'রে কাটল?
ইন্দু। দিদি আগেই তাকে পছন্দ করে বসে আছে। আমাকে আর সময় দিলে না।
ক্ষান্তমণি। বলিস কী! কমল নাকি? সে ওকে দেখলে কখন?
ইন্দু। দেখে নি। সেইটেই তো বিপদ। শব্দভেদী বাণের কথা রামায়ণে শোন নি?
ক্ষান্তমণি। শুনেছি।
ইন্দু। সব চেয়ে শক্ত বাণ হল সেইটে। শব্দের রাস্তা বেয়ে কখন এসে বুকে বেঁধে, কেউ দেখতেই পায় না।
ক্ষান্তমণি। একটু ভাই, বুঝিয়ে বল্। তোদের মতো আমার অত পড়াশুনো নেই।
ইন্দু। সেইটেতেই তোমার রক্ষে। নইলে কেবল পড়াশোনার জোরেই মরণ হতে পারত, দেখাশোনার দরকার হত না। তোমার বিনোদবাবু যে কবি তা জান না!
ক্ষান্তমণি। তা হোক-না কবি, হয়েছে কী?
ইন্দু। কমলদিদি ওর বই লুকিয়ে পড়ে। সেইটেই খারাপ লক্ষণ। বিনোদবাবুর ‘ আঙুরলতা ' বইখানা ওর বালিশের নীচে থাকে। আর তার ‘ কাননকুসুমিকা ' রেখেছে ধোবার বাড়ির হিসেবের খাতার তলায়।
ক্ষান্তমণি। কিন্তু ওর মুখে তো বিনোদবাবুর নামও শুনি নি।
ইন্দু। নামটা বুকের মধ্যে বাসা করেছে, তাই মুখে বের হতে চায় না।
ক্ষান্তমণি। কী যে বলিস, বুঝতে পারি নে — ওর লেখার এমন কী মন্ত্র আছে বল্ তো! আমাকে একটু নমুনা দে দেখি।
ইন্দু। তবে শোনো —
রসনায় ভাষা নাই, থাকি চুপে চুপে,
অন্তরে জোগায় সে যে বাণী।
সময় পায় না আঁখি মজিবারে রূপে,
গোপনে স্বপনে তারে জানি।