জগত্তারিণী। বাবা অক্ষয়, দেখো তো, মেয়েদের নিয়ে আমি কী করি। নেপো বসে বসে কাঁদছে ; নীর রেগে অস্থির, সে বলে সে কোনোমতেই বেরোবে না। ভদ্রলোকের ছেলেরা আজ এখনই আসবে, তাদের এখন কী বলে ফেরাব। তুমিই বাপু, ওদের শিখিয়ে পড়িয়ে বিবি করে তুলেছ, এখন তুমিই ওদের সামলাও।
[ প্রস্থান
পুরবালা। সত্যি, আমি ওদের রকম দেখে অবাক হয়ে গেছি, ওরা কি মনে করেছে ওরা —
অক্ষয়। বোধ হয় আমাকে ছাড়া আর - কাউকে ওরা পছন্দ করছে না ; তোমারই সহোদরা কিনা, রুচিটা তোমারই মতো।
পুরবালা। ঠাট্টা রাখো, এখন ঠাট্টার সময় নয়। তুমি ওদের একটু বুঝিয়ে বলবে কি না বলো। তুমি না বললে ওরা শুনবে না।
অক্ষয়। এত অনুগত! একেই বলে ভগ্নীপতিব্রতা শ্যালী। আচ্ছা, আমার কাছে একবার পাঠিয়ে দাও — দেখি।
[ পুরবালার প্রস্থান
নৃপবালা ও নীরবালার প্রবেশ
নীরবালা। না, মুখুজ্জেমশায়, সে কোনোমতেই হবে না।
নৃপবালা। মুখুজ্জেমশায়, তোমার দুটি পায়ে পড়ি, আমাদের যার - তার সামনে ও - রকম করে বের কোরো না।
অক্ষয়। ফাঁসির হুকুম হলে একজন বলেছিল আমাকে বেশি উঁচুতে চড়িয়ো না, আমার মাথা ঘোরা ব্যামো আছে। তোদের যে তাই হল। বিয়ে করতে যাচ্ছিস, এখন দেখা দিতে লজ্জা করলে চলবে কেন।
নীরবালা। কে বললে আমরা বিয়ে করতে যাচ্ছি।
অক্ষয়। অহো, শরীরে পুলক সঞ্চার হচ্ছে। কিন্তু হৃদয় দুর্বল এবং দৈব বলবান, যদি দৈবাৎ প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করতে হয় —
নীরবালা। না, ভঙ্গ হবে না।
অক্ষয়। হবে না তো? তবে নির্ভয়ে এসো, যুবক - দুটোকে দেখা দিয়ে আধপোড়া করে ছেড়ে দাও — হতভাগারা বাসায় ফিরে গিয়ে মরে থাকুক।
নীরবালা। অকারণে প্রাণিহত্যা করবার জন্য আমাদের এত উৎসাহ নেই।
অক্ষয়। জীবের প্রতি কী দয়া! কিন্তু, সামান্য ব্যাপার নিয়ে গৃহবিচ্ছেদ করবার দরকার কী। তোদের মা দিদি যখন ধরে পড়েছেন এবং ভদ্রলোক দুটি যখন গাড়িভাড়া করে আসছে তখন একবার মিনিট - পাঁচেকের মতো দেখা দিস, তার পরে আমি আছি — তোদের অনিচ্ছায় কোনোমতেই বিবাহ দিতে দেব না।
নীরবালা। কোনোমতেই না?