নৃপবালা ও নীরবালার প্রবেশ
নীরবালা। দিদি।
অক্ষয়। এখন দিদি বৈ আর কথা নেই, অকৃতজ্ঞ! দিদি যখন বিচ্ছেদদহনে উত্তরোত্তর তপ্তকাঞ্চনের মতো শ্রী ধারণ করছিলেন তখন তোমাদের ক'টিকে সুশীতল করে রেখেছিল কে।
নীরবালা। শুনছ দিদি। এমন মিথ্যে কথা! তুমি যতদিন ছিলে না আমাদের একবার ডেকেও জিজ্ঞাসা করেন নি, কেবল চিঠি লিখেছেন আর টেবিলের উপর দুই পা তুলে দিয়ে বই হাতে করে পড়েছেন। তুমি এসেছ, এখন আমাদের নিয়ে গান হবে, ঠাট্টা হবে, দেখাবেন যেন —
নৃপবালা। দিদি, তুমিও তো ভাই, এতদিন আমাদের একখানিও চিঠি লেখ নি।
পুরবালা। আমার কি সময় ছিল ভাই। মাকে নিয়ে দিন রাত ব্যস্ত থাকতে হয়েছিল।
অক্ষয়। যদি বলতে ‘তোদের ভগ্নীপতির ধ্যানে নিমগ্ন ছিলুম' তা হলে কি লোকে নিন্দে করত।
নীরবালা। তা হলে ভগ্নীপতির আস্পর্ধা আরো বেড়ে যেত। মুখুজ্জেমশায়, তুমি তোমার বাইরের ঘরে যাও - না। দিদি এতদিন পরে এসেছেন, আমরা কি ওঁকে নিয়ে একটু গল্প করতে পাব না।
অক্ষয়। নৃশংসে, বিরহদাবদগ্ধ তোর দিদিকে আবার বিরহে জ্বালাতে চাস? তোদের ভগ্নীপতিরূপ ঘনকৃষ্ণ মেঘ মিলনরূপ মুষলধারাবর্ষণ - দ্বারা প্রিয়ার চিত্তরূপ লতানিকুঞ্জে আনন্দরূপ কিশলয়োদ্গম ক'রে প্রেমরূপ বর্ষায় কটাক্ষরূপ বিদ্যুৎ —
নীরবালা। এবং বকুনিরূপ ভেকের কলরব —
শৈলবালার প্রবেশ
অক্ষয়। এসো এসো — উত্তমাধমমধ্যমা এই তিন শ্যালী না হলে আমার —
নীরবালা। উত্তমমধ্যম হয় না।
শৈলবালা। ( নৃপ ও নীরর প্রতি ) তোরা ভাই, একটু যা তো, আমাদের কথা আছে।
অক্ষয়। কথাটা কী বুঝতে পারছিস তো নীরু? হরিনাম - কথা নয়।
নীরবালা। আচ্ছা, তোমার আর বকতে হবে না।
[ নৃপ ও নীরর প্রস্থান
শৈলবালা। দিদি, নৃপ - নীরর জন্যে মা দুটি পাত্র তা হলে স্থির করেছেন?
পুরবালা। হাঁ, কথা একরকম ঠিক হয়ে গেছে। শুনেছি ছেলে দুটি মন্দ নয় — তারা মেয়ে দেখে পছন্দ করলেই পাকাপাকি হয়ে যাবে।
শৈলবালা। যদি পছন্দ না করে?
পুরবালা। তা হলে তাদের অদৃষ্ট মন্দ।
অক্ষয়। এবং আমার শ্যালী দুটির অদৃষ্ট ভালো।
শৈলবালা। নৃপ নীরু যদি পছন্দ না করে?