বাড়িওয়ালা। ( জনান্তিকে) শুনলে তো গিন্নি?
স্ত্রী। ( জনান্তিকে) শুনে হবে কী? তোমার উনপঞ্চাশ যে অনেক কাল হল পেরিয়েছে।
বাড়িওয়ালা। কিন্তু মাতাজিকে কি কালই সে বাড়িতে যেতে হবে?
মাতাজি। কাল উনত্রিশ তারিখে মঙ্গলবার পড়েছে। এমন দিন আর পাওয়া যাবে না।
বাড়িওয়ালা। ঠিক কথা। কাল উনত্রিশেও বটে, আবার মঙ্গলবারও বটে। কী আশ্চর্য! তা হলে তো কালই যেতে হচ্ছে বটে। তা-ই ঠিক করে দেব। ( মাতাজির প্রস্থান) এখন আমার এই নতুন ভাড়াটেদের ওঠাই কী বলে? বিদেশ থেকে এসেছে, হঠাৎ তারা এখন বাড়িই বা পায় কোথায়?
স্ত্রী। তাদের আপাতত এই বাড়িতে এনেই রাখো-না। আমরা নাহয় কিছুদিন ঝামাপুকুরে জামাইবাড়ি গিয়েই থাকব। তোমার ঐ মন্তর-জানা মেয়েমানুষকে এখানে রেখে কাজ নেই। বিদেয় করে দাও। ছেলেপিলের ঘর, কার কখন অপরাধ হয়, বলা যায় কি?
বাড়িওয়ালা। সেই ভালো। তাদের কোনোরকম করে ভুলিয়ে-ভালিয়ে আজকের মধ্যেই উনপঞ্চাশ নম্বর থেকে বাইশ নম্বরে এনে ফেলা যাক। বলি গে, পাড়ায় প্লেগ দেখা দিয়েছে, উনপঞ্চাশ নম্বরে প্লেগ হাঁসপাতাল বসবে।
অন্নদা। তোমার ঐ টাটকা লঙ্কার ধোঁয়ায় নাকের জলে চোখের জলে করলে যে হে! তোমার ঘরে আসা ছাড়তে হল।
আশু। টাটকা লঙ্কার ধোঁয়া তুমি কোথায় পেলে?
অন্নদা। ঐ যে তোমার তর্কালংকারের বকুনি। লোকটা তো বিস্তর টিকি নাড়লে, মাথামুণ্ডু কিছু পেলে কি?
আশু। মাথামুণ্ডু নইলে শুধু টিকি নড়বে কোথায়? কথাগুলো যদি শ্রদ্ধা করে শুনতে, তবে বুঝতে।
অন্নদা। যদি বুঝতেম, তবে শ্রদ্ধা করেতম। তুমি আশু, ফিজিকাল সায়ান্সে এম. এ. দিয়ে এলে— তুমি যে এত ঘন ঘন টিকি-নাড়া বরদাস্ত করছ এ যদি দেখতে পায় তবে প্রেসিডেন্সি কলেজের চুনকাম-করা দেওয়ালগুলো বিনি-খরচে লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে। আজ কথাটা কী হল বুঝিয়ে বলো দেখি।
আশু। পণ্ডিতমশায় পরিণয়তত্ত্ব ব্যাখ্যা করছিলেন।
অন্নদা। তত্ত্বটা আমার জানা খুব দরকার হয়ে পড়েছে। তর্কালংকারমশায় বলছিলেন, বিবাহের পূর্বে কন্যার সঙ্গে জানাশুনার চেষ্টা না করাই কর্তব্য। যুক্তিটা কী দিচ্ছিলেন, ভালো বোঝা গেল না।
আশু। তিনি বলছিলেন, সকল জিনিসের আরম্ভের মধ্যে একটা গোপনতা আছে। বীজ মাটির নীচে অন্ধকারের মধ্যে থাকে, তার পরে অঙ্কুরিত হলে তখন সূর্য-চন্দ্র-জল-বাতাসের সঙ্গে মুখোমুখি লড়াই করবার সময় আসে। বিবাহের পূর্বে কন্যার হৃদয়কে বিলাতি অনুকরণে বাইরে টানাটানি না করে তাকে আচ্ছন্ন আবৃত রাখাই কর্তব্য। তখন তার উপরে তাড়াতাড়ি দৃষ্টিক্ষেপ করতে যেয়ো না। সে যখন স্বভাবতই নিজে অঙ্কুরিত হয়ে তার অর্ধমুকুলিত সলজ্জ দৃষ্টিটুকু গোপনে তোমার দিকে অগ্রসর করতে থাকবে, তখনই তোমার অবসর।
অন্নদা। আমার অদৃষ্টে সে পরীক্ষা তো হয়ে গেছে। বিলাতি প্রথা মতে বিবাহের পূর্বে কন্যার হৃদয় নিয়ে টানা— হেঁচড়া করি নি; হৃদয়টা এত অন্ধকারের মধ্যে ছিল যে আমি তার কোনো খোঁজ পাই নি, তার পরে অঙ্কুরিত হল কি না হল তারও তো