আশু। আচ্ছা অন্নদা, তুমি যেন ব্রাহ্মই হয়েছিলে, কিন্তু তাই বলে স্ত্রী-পরিত্যাগ করতে গেলে কেন? স্ত্রী তো তেত্রিশ কোটির মধ্যে একটিও নয়। ঐটুকু পৌত্তলিকতা, রাখলেও ক্ষতি ছিল না।
অন্নদা। সে তো ঠিক কথা। স্ত্রী-পরিত্যাগ করা যায়, কিন্তু স্ত্রীজাতি তো বিদায় হন না— স্ত্রীকে ছাড়লে স্ত্রীজাতি বিশ্বব্যাপী হয়ে দেখা দেন, স্ত্রীপূজার মাত্রা মনে মনে বেড়ে ওঠে।
আশু। তবে?
অন্নদা। তবে শোনো। আমার শাশুড়ি ছিলেন না, শ্বশুর ভয়ংকর হিন্দু ছিলেন। যখন শুনলেন আমি ব্রাহ্ম হয়েছি, আমার স্ত্রীকে বিধবার বেশ পরিয়ে ব্রহ্মচারিণী করে কাশীতে গিয়ে বাস করলেন। তার পরে শুনছি হিন্দুশাস্ত্রের সমস্ত দেবতাতেও তৃপ্তি হয় নি, তার উপরে অল্কট্, ব্লাভাট্স্কি, অ্যানি বেসাণ্ট, সূক্ষ্মশরীর, মহাত্মা, প্লান্চেট, ভূতপ্রেত কিছুই বাদ যায় নি—
আশু। কেবল তুমি ছাড়া।
অন্নদা। আমাকে ব্রহ্মদৈত্য বলে বাদ দিলে।
আশু। তুমি তার আশা একেবারে ছেড়ে দিয়েছ?
অন্নদা। আশার অপরাধ নেই— তার পশ্চাতে এত বড়ো রেজিমেণ্ট লেগেছে, সে আর টিঁকল না। শুনেছি আমার শ্বশুর মারা গেছেন, এবং আমার স্ত্রী এখন পতিত-উদ্ধার করে বেড়াচ্ছেন।
আশু। তুমি একবার চরণে পতিত হওগে-না, যদি উদ্ধার করেন।
অন্নদা। ঠিকানাও জানি নে, প্রবৃত্তিও নেই।
আশু। তুমি কি এইরকম উড়ে উড়ে বেড়াবে?
অন্নদা। না হে, সোনার খাঁচার সন্ধানে আছি।
আশু। খাঁচাওয়ালার অভাব নেই, তবে সোনা জিনিসটা দুর্লভ বটে।
অন্নদা। আচ্ছা, আমার আলোচনা পরে হবে, কিন্তু তোমার কী বলো দেখি। তোমার তো আইবড়োলোক-প্রাপ্তির বিধান কোনো শাস্ত্রেই লেখে না। তার বেলা চুপ। থিওসফিতে তোমাকে খেলে। মন্ত্রতন্ত্র প্রাণায়াম হঠযোগ সুষুম্না-ইড়া-পিঙ্গলা এ-সমস্তই তোমাকে ছাড়ে, যদি বিবাহ কর।
আশু। তুমি মনে কর, আমি সবই অন্ধভাবে বিশ্বাস করি— তা নয়। এ-সমস্ত বিশ্বাসের যোগ্য কি না তাই আমি পরীক্ষা করে দেখতে চাই। অবিশ্বাসকেও তো প্রমাণের উপর স্থাপন করতে হবে।
অন্নদা। বসে বসে তাই করো। মরীচিকা-স্থাপনের জন্য পাথরের ভিত্তি গাঁথো। আমি এখন চললেম।
আশু। কোথায় যাচ্ছ?
অন্নদা। শবসাধনায় নয়।
আশু। তা তো জানি।