(স্বগত) তুমি রুদ্দুর বক্শি ব্রাহ্মণের ব্রহ্মোত্তর পুষ্করিণীটি কেড়ে নিয়ে খিড়কির পুকুর করেছ। আচ্ছা, দেখা যাবে তুমি ভোগ কর কেমন করে। ঐ পুকুরে দু বেলা ছত্রিশ জাতকে স্নান করাব তবে আমি ব্রাহ্মণের ছেলে। ( সমাগত প্রতিবেশীবর্গের প্রতি) তা, তোমরা তো সব শুনেছ দেখছি। সে স্বপ্নের কথা মনে হলে এখনো গা শিউরে ওঠে। ভাই, উপরি-উপরি তিন রাত্তির স্বপ্ন দেখলুম— মা গঙ্গা মকরের উপর চড়ে আমার শিয়রের কাছে এসে বললেন, ‘ ওরে বেটা নন্দ, তোর কুবুদ্ধি ধরেছিল, তাই তুই রুদ্দুর বক্শির সঙ্গে পুষ্করিণী নিয়ে মামলা করতে গিয়েছিলি। রুদ্দুর বক্শি কে তা জানিস? সত্যযুগে যে ছিল ভগীরথ সে-ই আজ বক্শির ঘরে আবির্ভাব করেছে। হুগলি পুলের উপর দিয়ে যেদিন থেকে গাড়ি চলেছে সেই দিন থেকে আমিও তোদের ঐ পুষ্করিণীতে এসে অধিষ্ঠান করেছি।' তখন আমার মনে হল, ওরে বাপ রে! কী কাণ্ডই করেছি! যিনি স্বয়ং কলিযুগের ভগীরথ তাঁরই সঙ্গে কিনা গঙ্গার দখল নিয়ে আদালতে মকদ্দমা! এমন পাপও করে! এখন বুঝতে পারছি মকদ্দমায় কেন হার হল এবং তোমরা পাড়ার সকলেই-বা আদালতে হলফ নিয়ে কেন পরিষ্কার মিথ্যে সাক্ষি দিয়ে এলে। এ-সমস্তই দেবতার কাণ্ড। তোমাদের মুখ দিয়ে অনর্গল মিথ্যে কথা একেবারে যেন গোমুখী থেকে গঙ্গাস্রোতের মতো বেরোতে লাগল; আমি নিতান্ত মূঢ়মতি পাপিষ্ঠ বলে প্রকৃত তত্ত্ব তখনো বুঝতে পারলুম না— মায়াতে অন্ধ হয়ে রইলুম এবং টাকাগুলো কেবল উকিলে লুটে খেলে!
অশ্রুবিসর্জন। এবং ভক্তিবিহ্বল নরনারীগণের হরিধ্বনি-
সহকারে কলিযুগের ভগীরথ-দর্শনে গমন