চেয়ে রই রাতের আকাশ - পানে,
মন যে কী চায় তা মনই জানে!
আশা জাগে কেন অকারণে
আমার মনে ক্ষণে ক্ষণে —
ব্যথার টানে তোমায় আনবে দ্বারে।
নেপথ্যে। অবলাকান্তবাবু আছেন?
বিপিন ঘরে প্রবিষ্ট ও সচকিত হইয়া দণ্ডায়মান
নীরবালা মুহূর্ত হতবুদ্ধি হইয়া দ্রুতবেগে বহিষ্ক্রান্ত
শৈলবালা। আসুন বিপিনবাবু।
বিপিন। ঠিক করে বলুন, আসব কি। আমি আসার দরুন আপনাদের কোনোরকম লোকসান নেই?
রসিক। ঘর থেকে কিছু লোকসান না করলে লাভ হয় না বিপিনবাবু, ব্যাবসার এইরকম নিয়ম। যা গেল তা আবার দুনো হয়ে ফিরে আসতে পারে, কী বল অবলাকান্ত।
শৈলবালা। রসিকদাদার রসিকতা আজকাল একটু শক্ত হয়ে আসছে।
রসিক। গুড় জমে যেরকম শক্ত হয়ে আসে। কিন্তু, বিপিনবাবু কী ভাবছেন বলুন দেখি।
বিপিন। ভাবছি কী ছুতো করে বিদায় নিলে আমাকে বিদায় দিতে আপনাদের ভদ্রতায় বাধবে না।
শৈলবালা। বন্ধুত্বে যদি বাধে?
বিপিন। তা হলে ছুতো খোঁজবার কোনো দরকারই হয় না।
শৈলবালা। তবে সেই খোঁজটা পরিত্যাগ করুন, ভালো হয়ে বসুন।
রসিক। মুখখানা প্রসন্ন করুন বিপিনবাবু। আমাদের প্রতি ঈর্ষা করবেন না। আমি তো বৃদ্ধ, যুবকের ঈর্ষার যোগ্যই নই। আর, আমাদের সুকুমারমূর্তি অবলাকান্তবাবুকে কোনো স্ত্রীলোক পুরুষ বলে জ্ঞানই করে না। আপনাকে দেখে যদি কোনো সুন্দরী কিশোরী ত্রস্তহরিণীর মতো পলায়ন করে থাকেন তা হলে মনকে এই বলে সান্ত্বনা দেবেন যে, তিনি আপনাকে পুরুষ বলেই মস্ত খাতিরটা করেছেন। হায় রে হতভাগ্য রসিক, তোকে দেখে কোনো তরুণী লজ্জাতে পলায়নও করে না।
বিপিন। রসিকবাবু আপনাকেও যে দলে টানছেন অবলাকান্তবাবু। এ কিরকম হল।
শৈলবালা। কী জানি বিপিনবাবু, আমার এই অবলাকান্ত নামটাই মিথ্যে — কোনো অবলা তো এ পর্যন্ত আমাকে কান্ত বলে বরণ করে নি।
বিপিন। হতাশ হবেন না, এখনো সময় আছে।
শৈলবালা। সে আশা এবং সে সময় যদি থাকত তা হলে চিরকুমার - সভায় নাম লেখাতে যেতুম না।
বিপিন। ( স্বগত ) এঁর মনের মধ্যে একটা কী বেদনা রয়েছে, নইলে এত অল্প বয়সে এই কাঁচামুখে এমন স্নিগ্ধ কোমল করুণ ভাব থাকত না। এটা কিসের খাতা। গান লেখা দেখছি। ‘নীরবালা দেবী'। ( পাঠ )
শৈলবালা। কী পড়ছেন বিপিনবাবু।
বিপিন। কোনো একটি অপরিচিতার কাছে অপরাধ করছি, হয়তো তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবার সুযোগ পাব না এবং হয়তো তাঁর কাছে শাস্তি পাবারও সৌভাগ্য হবে না, কিন্তু এই গানগুলি মানিক এবং হাতের অক্ষরগুলি মুক্তো। যদি লোভে পড়ে