মহিষী। সেজন্যে নয় মহারাজ।
প্রতাপ। তবে কী জন্যে।
মহিষী। দেখো, তবে খুলে বলি! ঐ বউ আমার উদয়কে যেন জাদু করে রেখেছে সে তো তুমি জান। ওকে যদি বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিই তা হলে-
প্রতাপ। এমন জাদু তো ভেঙে দিতে হবে- এ বাড়ি থেকে ঐ মেয়েটাকে নির্বাসিত করে দিলেই জাদু ভাঙবে।
মহিষী। মহারাজ, এ-সব কথা তোমরা বুঝবে না- আমি ঠিক করেছি।
প্রতাপ। কী ঠিক করেছ জানতে চাই।
মহিষী। আমি বামীকে দিয়ে মঙ্গলার কাছ থেকে ওষুধ আনিয়েছি।
প্রতাপ। ওষুধ কিসের জন্যে?
মহিষী। ওকে ওষুধ খাওয়ালেই ওর জাদু কেটে যাবে। মঙ্গলার ওষুধ অব্যর্থ, সকলেই জানে।
প্রতাপ। আমি তোমার ওষুধ-টষুধ বুঝি নে- আমি এক ওষুধ জানি- শেষকালে সেই ওষুধ প্রয়োগ করব। আমি তোমাকে বলে রাখছি, কাল যদি ওই শ্রীপুরের মেয়ে শ্রীপুরে ফিরে না যায় তা হলে আমি উদয়কে সুদ্ধ নির্বাসনে পাঠাব- এখন যা করতে হয় করোগে।
মহিষী। আর তো বাঁচি নে। কী যে করব মাথামুণ্ডু ভেবে পাই নে।
[ প্রস্থান
উদয়াদিত্যের প্রবেশ
প্রতাপ। সীতারাম-ভাগবতের বেতন বন্ধ হয়েছে, সে কি রাজকোষে অর্থ নেই বলে?
উদয়। না মহারাজ, আমি বলপূর্বক তাদের কর্তব্যে বাধা দিয়েছি, আমাকে তারই দণ্ড দেবার জন্যে।
প্রতাপ। বউমা তাদের গোপনে অর্থসাহায্য করছেন।
উদয়। আমিই তাঁকে সাহায্য করতে বলেছি।
প্রতাপ। আমার ইচ্ছার অপমান করবার জন্যে?
উদয়। না মহারাজ, যে দণ্ড আমারই প্রাপ্য তা নিজে গ্রহণ করবার জন্যে।
প্রতাপ। আমি আদেশ করছি, ভবিষ্যতে তাদের আর যেন অর্থসাহায্য না করা হয়।
উদয়। আমার প্রতি আরো গুরুতর শাস্তির আদেশ হল।
প্রতাপ। আর বউমাকে বোলো, তিনি আমাকে একেবারেই ভয় করেন না- দীর্ঘকাল তাঁকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে বলেই এ রকম ঘটতে পেরেছে, কিন্তু তিনি জানতে পারবেন স্পর্ধা প্রকাশ করা নিরাপদ নয়। তিনি মনে রাখেন যেন আমার রাজবাড়ি আমার রাজত্বের বাইরে নয়।
[ উভয়ের প্রস্থান
মহিষী ও বামীর প্রবেশ
মহিষী। ওষুধের কী করলি?
বামী। সে তো এনেছি — পানের সঙ্গে সেজে দিয়েছি।
মহিষী। খাঁটি ওষুধ তো?