সুরমা। শুনেছিস তো বিভা, মাধবপুর থেকে ধনঞ্জয় বৈরাগী এসেছেন। তাঁর তো খুব নাম শুনেছি, বড়ো ইচ্ছা করে তাঁর গান শুনি। গান শুনবি বিভা? ঐ দেখ, কেবল অতটুকু মাথা নাড়লে হবে না। লোক দিয়ে বলে পাঠিয়েছি, আজ যেন একবার মন্দিরে গান গাইতে আসেন, তা হলে আমরা উপরের ঘর থেকে শুনতে পাব! ও কী, পালাচ্ছিস কোথায়?
বিভা। দাদা আসছেন।
সুরমা। তা, এলই বা দাদা।
বিভা। না, আমি যাই বউরানী।
[ প্রস্থান
সুরমা। আজ ওর দাদার কাছেও মুখ দেখাতে পারছে না।
উদয়াদিত্যের প্রবেশ
আজ ধনঞ্জয় বৈরাগীকে আমাদের মন্দিরে গান গাবার জন্য ডেকে পাঠিয়েছি।
উদয়। সে তো হবে না।
সুরমা। কেন?
উদয়। তাঁকে মহারাজ কয়েদ করেছেন।
সুরমা। কী সর্বনাশ, অমন সাধুকে কয়েদ করেছেন?
উদয়। ওটা আমার উপর রাগ করে। তিনি জানেন আমি বৈরাগীকে ভক্তি করি, মহারাজের কঠিন আদেশেও আমি তাঁর গায়ে হাত দিই নি- সেইজন্য আমাকে দেখিয়ে দিলেন রাজকার্য কেমন করে করতে হয়।
সুরমা। কিন্তু এগুলো যে অমঙ্গলের কথা- শুনলে ভয় হয়। কী করা যাবে!
উদয়। মন্ত্রী আমার অনুরোধে বৈরাগীকে গারদে না দিয়ে তাঁর বাড়িতে লুকিয়ে রাখতে রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু ধনঞ্জয় কিছুতেই রাজি হলেন না। তিনি বললেন, আমি গারদেই যাব, সেখানে যত কয়েদি আছে তাদের প্রভুর নামগান শুনিয়ে আসব। তিনি যেখানেই থাকুন তাঁর জন্যে কাউকেই ভাবতে হবে না, তাঁর ভাবনার লোক উপরে আছেন।
সুরমা। মাধবপুরের প্রজাদের জন্যে আমি সব সিধে সাজিয়ে রেখেছি, কোথায় সব পাঠাব?
উদয়। গোপনে পাঠাতে হবে। নির্বোধগুলো আমাকে রাজা রাজা করে চেঁচাচ্ছিল, মহারাজা সেটা শুনতে পেয়েছেন — নিশ্চয় তাঁর ভালো লাগে নি। এখন তোমার ঘর থেকে তাদের খাবার পাঠানো হলে মনে কী সন্দেহ করবেন বলা যায় না।
সুরমা। আচ্ছা, সে আমি বিভাকে দিয়ে পাঠিয়ে দেব। কিন্তু আমি ভাবছি, কাল রাত্রে যারা পাহারায় ছিল সেই সীতারাম-ভাগবতের কী দশা হবে!
উদয়। মহারাজ ওদের গায়ে হাত দেবেন না, সে ভয় নেই।
সুরমা। কেন?
উদয়। মহারাজ কখনো ছোটো শিকারকে বধ করেন না। দেখলে না, রমাই ভাঁড়কে তিনি ছেড়ে দিলেন।
সুরমা। কিন্তু শাস্তি তো তিনি একজন কাউকে না দিয়ে থাকবেন না।
উদয়। সে তো আমি আছি।
সুরমা। ও কথা বোলো না।