গান
চলেছে ছুটিয়া পলাতকা হিয়া,
বেগে বহে শিরা ধমনী।
হায় হায় হায় ধরিবারে তায়
পিছে পিছে ধায় রমণী।
বায়ুবেগভরে উড়ে অঞ্চল,
লটপট বেণী দুলে চঞ্চল —
এ কী রে রঙ্গ, আকুল - অঙ্গ
ছুটে কুরঙ্গগমনী।
নীরবালা। কবিবর, সাধু সাধু। কিন্তু, তোমার রচনায় কোনো কোনো আধুনিক কবির ছায়া দেখতে পাই যেন।
অক্ষয়। তার কারণ, আমিও অত্যন্ত আধুনিক। তোরা কি ভাবিস তোদের মুখুজ্জেমশায় কৃত্তিবাস ওঝার যমজ ভাই। ভূগোলের মাইল গুনে দিচ্ছিস, আর ইতিহাসের তারিখ ভুল? তা হলে আর বিদুষী শ্যালী থেকে ফল হল কী। এতবড়ো আধুনিকটাকে তোদের প্রাচীন বলে ভ্রম হয়?
নীরবালা। মুখুজ্জেমশায়, শিব যখন বিবাহসভায় গিয়েছিলেন তখন তাঁর শ্যালীরাও ঐরকম ভুল করেছিলেন, কিন্তু উমার চোখে তো অন্যরকম ঠেকেছিল। তোমার ভাবনা কিসের, দিদি তোমাকে আধুনিক বলেই জানেন।
অক্ষয়। মূঢ়ে, শিবের যদি শ্যালী থাকত তা হলে কি তাঁর ধ্যানভঙ্গ করবার জন্যে অনঙ্গদেবের দরকার হত। আমার সঙ্গে তাঁর তুলনা?
নৃপবালা। আচ্ছা মুখুজ্জেমশায়, এতক্ষণ তুমি এখানে বসে বসে কী করছিলে।
অক্ষয়। তোদের গয়লাবাড়ির দুধের হিসেব লিখছিলুম।
নীরবালা। ( ডেস্কের উপর হইতে অসমাপ্ত চিঠি তুলিয়া লইয়া ) এই তোমার গয়লাবাড়ির হিসেব? হিসেবের মধ্যে ক্ষীর - নবনীর অংশটাই বেশি।
অক্ষয়। ( ব্যস্তসমস্ত ) না না, ওটা নিয়ে গোল করিস নে, আহা, দিয়ে যা —
নৃপবালা। নীরুভাই, জ্বালাস নে, চিঠিখানা ওঁকে ফিরিয়ে দে — ওখানে শ্যালীর উপদ্রব সয় না। কিন্তু মুখুজ্জেমশায়, তুমি দিদিকে চিঠিতে কী বলে সম্বোধন কর বলো - না।
অক্ষয়। রোজ নূতন সম্বোধন করে থাকি —
নৃপবালা। আজ কী করেছ বলো দেখি।
অক্ষয়। শুনবে? তবে সখী, শোনো। চঞ্চলচকিতচিত্তচকোরচৌর চঞ্চুচুম্বিতচারুচন্দ্রিকরুচিরুচির চিরচন্দ্রমা।
নীরবালা। চমৎকার চাটুচাতুর্য।
অক্ষয়। এর মধ্যে চৌর্যবৃত্তি নেই, চর্বিতচর্বণশূন্য।
নৃপবালা। ( সবিস্ময়ে ) আচ্ছা মুখুজ্জেমশায়, রোজ রোজ তুমি এইরকম লম্বা লম্বা সম্বোধন রচনা কর? তাই বুঝি দিদিকে চিঠি লিখতে এত দেরি হয়?
অক্ষয়। ঐজন্যেই তো নৃপর কাছে আমার মিথ্যে কথা চলে না। ভগবান যে আমাকে সদ্য সদ্য বানিয়ে বলবার এমন