অক্ষয় চলিয়া গেলে ঘরটি শ্রীশ ভালো করিয়া দেখিয়া লইল। ঘরে দুটি দীপ জ্বলিতেছে
সেই দুটিকে বেষ্টন করিয়া ফিরোজ রঙের রেশমের অবগুণ্ঠন। সেই আবরণ ভেদ করিয়া ঘরের আলোটি
মৃদু এবং রঙিন হইয়া উঠিয়াছে। টেবিলের মাঝখানে ফুলদানিতে ফুল সাজানো
বিপিন। ( ঈষৎ হাসিয়া ) যা বল ভাই, এ ঘরটি চিরকুমার - সভার উপযুক্ত নয়।
শ্রীশ। ( চকিত হইয়া ) কেন নয়।
বিপিন। ঘরের সজ্জাগুলি তোমার নবীন সন্ন্যাসীদের পক্ষেও যেন বেশি বোধ হচ্ছে।
শ্রীশ। আমার সন্ন্যাসধর্মের পক্ষে বেশি কিছু হতে পারে না।
বিপিন। কেবল নারী ছাড়া।
শ্রীশ। হাঁ, ঐ একটিমাত্র।
অন্য দিনের মতো কথাটায় তেমন জোর পৌঁছিল না
বিপিন। দেয়ালের ছবি এবং অন্যান্য পাঁচরকমে এ ঘরটিতে সেই নারীজাতির অনেকগুলি পরিচয় পাওয়া যায় যেন।
শ্রীশ। সংসারে নারীজাতির পরিচয় তো সর্বত্রই আছে।
বিপিন। তা তো বটেই। কবিদের কথা যদি বিশ্বাস করা যায় তা হলে চাঁদে ফুলে লতায় পাতায় কোনোখানেই নারীজাতির পরিচয় থেকে হতভাগ্য পুরুষমানুষের নিষ্কৃতি পাবার জো নেই।
শ্রীশ। ( হাসিয়া ) কেবল ভেবেছিলুম, চন্দ্রবাবুর বাসার সেই একতলার ঘরটিতে রমণীর কোনো সংস্রব ছিল না। আজ সে ভ্রমটা হঠাৎ ভেঙে গেল। নাঃ, ওরা পৃথিবীময় ছড়িয়ে পড়েছে।
বিপিন। বেচারা চিরকুমার ক'টির জন্যে একটা কোনো ফাঁক রাখে নি। সভা করবার জায়গা পাওয়াই দায়।
শ্রীশ। এই দেখো - না।
কোণের একটা টিপাই হইতে গোটাদুয়েক চুলের কাঁটা তুলিয়া দেখাইল
বিপিন। ( কাঁটা দুটি লইয়া পর্যবেক্ষণ করিয়া ) ওহে ভাই, এ স্থানটা তো কুমারদের পক্ষে নিষ্কণ্টক নয়।
শ্রীশ। ফুলও আছে, কাঁটাও আছে।
বিপিন। সেইটেই তো বিপদ। কেবল কাঁটা থাকলে এড়িয়ে চলা যায়।
শ্রীশ অপর কোণের ছোটো বইয়ের শেলফ হইতে বইগুলি তুলিয়া দেখিতে লাগিল — কতকগুলি নভেল
কতকগুলি ইংরাজি কাব্যসংগ্রহ। প্যাল্গ্রেভের গীতিকাব্যের স্বর্ণভাণ্ডার খুলিয়া দেখিল
মার্জিনে মেয়েলি অক্ষরে নোট লেখা — তখন গোড়ার পাতাটা উল্টাইয়া দেখিল
দেখিয়া একটু নাড়িয়া - চাড়িয়া বিপিনের সম্মুখে ধরিল