মন্ত্রী। যে-আজ্ঞে।
প্রতাপ। অমন তাড়াতাড়ি ‘ যে-আজ্ঞে ' বললে চলবে না। তুমি মনে করছ নিজের পিতৃব্যকে বধ করা সকল অবস্থাতেই পাপ। ‘ না ' বোলো না, ঠিক এই কথাটাই তোমার মনে জাগছে। কিন্তু মনে কোরো না এর উত্তর নেই। পিতার অনুরোধে ভৃগু তাঁর মাকে বধ করেছিলেন, আর ধর্মের অনুরোধে আমি আমার পিতৃব্যকে কেন বধ করব না?
মন্ত্রী। কিন্তু দিল্লীশ্বর যদি শোনেন, তবে-
প্রতাপ। আর যাই কর, দিল্লীশ্বরের ভয় আমাকে দেখিয়ো না!
মন্ত্রী। প্রজারা জানতে পারলে কী বলবে?
প্রতাপ। জানতে পারলে তো।
মন্ত্রী। এ কথা কখনোই চাপা থাকবে না।
প্রতাপ। দেখো মন্ত্রী, কেবল ভয় দেখিয়ে আমাকে দুর্বল করে তোলবার জন্যেই কি তোমাকে রেখেছি?
মন্ত্রী। মহারাজ, যুবরাজ উদয়াদিত্য —
প্রতাপ। দিল্লীশ্বর গেল, প্রজারা গেল, শেষকালে উদয়াদিত্য! সেই স্ত্রৈণ বালকটার কথা আমার কাছে
তুলো না! দেখো দেখি মন্ত্রী, সে পাঠান দুটো এখনো এল না!
মন্ত্রী। সেটা তো আমার দোষ নয় মহারাজ।
প্রতাপ। দোষের কথা হচ্ছে না। দেরি কেন হচ্ছে তুমি কী অনুমান কর তাই জিজ্ঞাসা করছি।
মন্ত্রী। শিমুলতলি তো কাছে নয়। কাজ সেরে আসতে দেরি তো হবেই।
প্রতাপ। কী হল?
পাঠান। মহারাজ, এতক্ষণে কাজ নিকেশ হয়ে গেছে।
প্রতাপ। সে কী রকম কথা? তবে তুমি জান না?
পাঠান। জানি বৈকি। কাজ শেষ হয়ে গেছে ভুল নেই, তবে আমি সে সময়ে উপস্থিত ছিলুম না। আমার ভাই হোসেন খাঁ'র উপর ভার আছে, সে খুব হুঁশিয়ার। মহারাজের পরামর্শমতে আমি খুড়া রাজাসাহেবের লোকজনদের তফাত করেই চলে আসছি।
প্রতাপ। হোসেন যদি ফাঁকি দেয়।
পাঠান। তোবা। সে তেমন বেইমান নয়। মহারাজ, আমি আমার শির জামিন রাখলুম।
প্রতাপ। আচ্ছা, এইখানে হাজির থাকো, তোমার ভাই ফিরে এলে বক্শিশ মিলবে। ( পাঠানের বাহিরে গমন) এটা যাতে প্রজারা টের না পায় সে চেষ্টা করতে হবে।
মন্ত্রী। মহারাজ, এ কথা গোপন থাকবে না।
প্রতাপ। কিসে তুমি জানলে?
মন্ত্রী। আপনার পিতৃব্যের প্রতি বিদ্বেষ আপনি তো কোনোদিন লুকোতে পারেন নি। এমন-কি, আপনার কন্যার বিবাহেও