পূর্ণ। ভয় নেই ভাই, এখনো মরিয়া হয়ে উঠি নি। তোমার এই ছাদ - ভরা জ্যোৎস্না আর ঐ ফুলের গন্ধ কি কৌমার্যব্রত- রক্ষার সহায়তা করবার জন্যে সৃষ্টি হয়েছে। মনের মধ্যে মাঝে মাঝে যে বাষ্প জমে আমি সেটাকে উচ্ছ্বসিত করে দেওয়াই ভালো বোধ করি ; চেপে রেখে নিজেকে ভোলাতে গেলে কোন্দিন চিরকুমারব্রতের লোহার বয়্লারখানা ফেটে যাবে। যাই হোক, যদি সন্ন্যাসী হওয়াই স্থির কর তো আমিও যোগ দেব — কিন্তু আপাতত সভাটাকে তো রক্ষা করতে হবে।
শ্রীশ। কেন? কী হয়েছে?
পূর্ণ। অক্ষয়বাবু আমাদের সভাকে যে স্থানান্তর করবার ব্যবস্থা করছেন, এটা আমার ভালো ঠেকছে না।
শ্রীশ। সন্দেহ জিনিসটা নাস্তিকতার ছায়া। মন্দ হবে, ভেঙে যাবে, নষ্ট হবে, এ - সব ভাব আমি কোনো অবস্থাতেই মনে স্থান দিই নে। ভালোই হবে, যা হচ্ছে বেশ হচ্ছে, চিরকুমার - সভার উদার বিস্তীর্ণ ভবিষ্যৎ আমি চোখের সম্মুখে দেখতে পাচ্ছি — অক্ষয়বাবু সভাকে এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে নিমন্ত্রণ করে তার কী অনিষ্ট করতে পারেন। কেবল গলির এক নম্বর থেকে আর - এক নম্বরে নয়, আমাদের যে পথে - পথে দেশে - দেশে সঞ্চরণ করে বেড়াতে হবে। সন্দেহ শঙ্কা উদ্বেগ এগুলো মন থেকে দূর করে দাও পূর্ণবাবু — বিশ্বাস এবং আনন্দ না হলে বড়ো কাজ হয় না।
বিপিন। দিনকতক দেখাই যাক - না। যদি কোনো অসুবিধার কারণ ঘটে তা হলে স্বস্থানে ফিরে আসা যাবে — আমাদের সেই অন্ধকার বিবরটি ফস্ করে কেউ কেড়ে নিচ্ছে না।
অকস্মাৎ চন্দ্রমাধববাবুর সবেগে প্রবেশ। তিনজনের সসম্ভ্রমে উত্থান
চন্দ্রবাবু। দেখো, আমি সেই কথাটা ভাবছিলুম —
শ্রীশ। বসুন।
চন্দ্রবাবু। না না, বসব না, আমি এখনই যাচ্ছি। আমি বলছিলুম, সন্ন্যাসব্রতের জন্যে আমাদের এখন থেকে প্রস্তুত হতে হবে। হঠাৎ একটা অপঘাত ঘটলে, কিংবা সাধারণ জ্বরজ্বালায়, কিরকম চিকিৎ সা সে আমাদের শিক্ষা করতে হবে — ডাক্তার রামরতনবাবু ফি রবিবারে আমাদের দু ঘণ্টা করে বক্তৃতা দেবেন বন্দোবস্ত করে এসেছি।
শ্রীশ। কিন্তু, তাতে অনেক বিলম্ব হবে না?
চন্দ্রবাবু। বিলম্ব তো হবেই, কাজটি তো সহজ নয়। কেবল তাই নয় — আমাদের কিছু কিছু আইন অধ্যয়নও দরকার। অবিচার অত্যাচার থেকে রক্ষা করা এবং কার কতদূর অধিকার সেটা চাষাভুষোদের বুঝিয়ে দেওয়া আমাদের কাজ।
শ্রীশ। চন্দ্রবাবু, বসুন —
চন্দ্রবাবু। না শ্রীশবাবু, বসতে পারছি নে, আমার একটু কাজ আছে। আর - একটি আমাদের করতে হচ্ছে — গোরুর গাড়ি, ঢেঁকি, তাঁত প্রভৃতি আমাদের দেশী অত্যাবশ্যক জিনিসগুলিকে একটু - আধটু সংশোধন করে যাতে কোনো অংশে তাদের সস্তা বা মজবুত বা বেশি উপযোগী করে তুলতে পারি সে চেষ্টা আমাদের করতে হবে। এবার গ্রীষ্মের অবকাশে কেদারবাবুদের কারখানায় গিয়ে প্রত্যহ আমাদের কতকগুলি পরীক্ষা করা চাই।
শ্রীশ। চন্দ্রবাবু, অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছেন —
চৌকি অগ্রসর - করণ
চন্দ্রবাবু। না না, আমি এখনই যাচ্ছি। দেখো, আমার মত এই যে, এই - সমস্ত গ্রামের ব্যবহার্য সামান্য জিনিসগুলির যদি আমরা কোনো উন্নতি করতে পারি তা হলে তাতে করে চাষাদের মনের মধ্যে যেরকম আন্দোলন হবে বড়ো বড়ো সংস্কারকার্যেও