শ্রীশ। সে তো ঠিক কথা। কেবল একটি বিষয়ে আমাদের খুব দৃঢ় হতে হবে, স্ত্রীজাতির কোনো সংস্রব রাখব না।
বিপিন। মাল্যচন্দন অঙ্গদকুণ্ডল সবই রাখতে চাও, কেবল ঐ একটা বিষয়ে এত বেশি দৃঢ়তা কেন?
শ্রীশ। ঐগুলো রাখছি ব'লেই দৃঢ়তা। যেজন্যে চৈতন্য তাঁর অনুচরদের স্ত্রীলোকের সঙ্গ থেকে কঠিন শাসনে দূরে রেখেছিলেন। তাঁর ধর্ম অনুরাগ এবং সৌন্দর্যের ধর্ম, সেজন্যেই তাঁর পক্ষে প্রলোভনের ফাঁদ অনেক ছিল।
বিপিন। তা হলে ভয়টুকুও আছে।
শ্রীশ। আমার নিজের জন্যে লেশমাত্র নেই। আমি আমার মনকে পৃথিবীর বিচিত্র সৌন্দর্যে ব্যাপ্ত করে রেখে দিই, কোনো একটা ফাঁদে আমাকে ধরে কার সাধ্য? কিন্তু তোমরা যে দিনরাত্রি ফুটবল টেনিস ক্রিকেট নিয়ে থাক, তোমরা একবার পড়লে ব্যাট্বল গুলিডাণ্ডা সবসুদ্ধ ঘাড় - মোড় ভেঙে পড়বে।
বিপিন। আচ্ছা ভাই, সময় উপস্থিত হলে দেখা যাবে।
শ্রীশ। ও কথা ভালো নয়। সময় উপস্থিত হবে না, সময় উপস্থিত হতে দেব না। সময় তো রথে চড়ে আসেন না, আমরা তাঁকে ঘাড়ে করে নিয়ে আসি ; কিন্তু তুমি যে সময়টার কথা বলছ তাকে বাহন - অভাবে ফিরতেই হবে।
পূর্ণবাবুর প্রবেশ
উভয়ে। এসো পূর্ণবাবু।
বিপিন তাহাকে কেদারাটা ছাড়িয়া দিয়া একটা চৌকি টানিয়া লইয়া বসিল
পূর্ণ। তোমাদের এই বারান্দায় জ্যোৎস্নাটি তো মন্দ রচনা কর নি,মাঝে মাঝে থামের ছায়া ফেলে ফেলে সাজিয়েছ ভালো।
শ্রীশ। ছাদের উপর জ্যোৎস্না রচনা করা প্রভৃতি কতকগুলি অত্যাশ্চর্য ক্ষমতা জন্মাবার পূর্ব হতেই আমার আছে। কিন্তু দেখো পূর্ণবাবু, ঐ দেশালাই করা - টরা ওগুলো আমার ভালো আসে না।
পূর্ণ। ( ফুলের মালার দিকে চাহিয়া ) সন্ন্যাসধর্মেই কি তোমার অসামান্য দখল আছে নাকি।
শ্রীশ। সেই কথাই তো হচ্ছিল। সন্ন্যাসধর্ম তুমি কাকে বল শুনি।
পূর্ণ। যে ধর্মে দর্জি ধোবা নাপিতের কোনো সহায়তা নিতে হয় না, তাঁতিকে একেবারেই অগ্রাহ্য করতে হয়, পিয়ার্স্ সোপের বিজ্ঞাপনের দিকে দৃক্পাত করতে হয় না —
শ্রীশ। আরে ছিঃ, সে সন্ন্যাসধর্ম তো বুড়ো হয়ে মরে গেছে। এখন নবীন সন্ন্যাসী ব'লে একটা সম্প্রদায় গড়তে হবে —
পূর্ণ। বিদ্যাসুন্দরের যাত্রায় যে নবীন সন্ন্যাসী আছেন তিনি মন্দ দৃষ্টান্ত নন, কিন্তু তিনি তো চিরকুমার - সভার বিধানমতে চলেন নি।
শ্রীশ। যদি চলতেন তা হলে তিনিই ঠিক দৃষ্টান্ত হতে পারতেন। সাজে সজ্জায় বাক্যে আচরণে সুন্দর এবং সুনিপুণ হতে হবে—
পূর্ণ। কেবল রাজকন্যার দিক থেকে দৃষ্টি নামাতে হবে। এই তো? বিনি সুতার মালা গাঁথতে হবে, কিন্তু সে মালা পরাতে হবে কার গলায় হে।