মন্ত্রী। নিজেদের রক্ষা করো, তার পরে অন্য কথা। আমার তো মনে হচ্ছে রথটা ঠিক তোমাদের অস্ত্রশালার দিকে ঝুঁকেছে, ওর আর কিছু চিহ্ন বাকি থাকবে না। ঐ দেখো।
সৈনিক। উপায়?
মন্ত্রী। ওদের সঙ্গে মিলে রশি ধরো-গে — তা হলে রক্ষা পাবার পথে রথের বেগটাকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। আর দ্বিধা করবার সময় নেই।
[ প্রস্থান
সৈনিক। ( পরস্পর) কী করবে। ঠাকুর, তুমি কী করবে।
পুরোহিত। বীরগণ, তোমরা কী করবে।
সৈনিক। জানি নে, রশি ধরব না লড়াই করব! ঠাকুর, তুমি কী করবে।
পুরোহিত। জানি নে, রশি ধরব না আবার শাস্ত্র আওড়াতে বসব!
১ সৈনিক। শুনতে পাচ্ছ — হুড়মুড় শব্দে পৃথিবীটা যেন ভেঙেচুরে পড়ছে।
২ সৈনিক। চেয়ে দেখ, ওরা টানছে বলে মনেই হচ্ছে না। রথটাই ওদের ঠেলে নিয়ে চলেছে।
৩ সৈনিক। পুরুতঠাকুর, দেখছ রথটা যেন বেঁচে উঠেছে। কী রকম হেঁকে চলেছে। এতবার রথযাত্রা দেখেছি, ওঁর এরকম সজীবমূর্তি কখনো দেখি নি। এতকাল ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে চলেছিল, আজ জেগে চলেছে। তাই আমাদের পথ মানছে না, নিজের পথ বানিয়ে নিচ্ছে।
২ সৈনিক। কিন্তু গেল যে সব। রথযাত্রার এমন সর্বনেশে উৎসব তো কোনো দিন দেখি নি। ঐ যে কবি আসছে, ওকে জিজ্ঞাসা করো-না, এ-সবের মানে কী।
পুরোহিত। আমরাই বুঝতে পারলুম না, কবি বুঝতে পারবে? ওরা তো কেবল বানিয়ে কথা বলে, সনাতন শাস্ত্রের কথা জানেই না।
১ সৈনিক। শাস্ত্রের কথাগুলো কোন্কালে মরে গেছে ঠাকুর! তাই তোমাদের কথা তো আর খাটে না দেখি। ওদের যে সব তাজা কথা তাই শুনলে বিশ্বাস হয়।
কবির প্রবেশ
২ সৈনিক। কবি, আজ রথযাত্রায় এই যে-সব উলটো-পালটা কাণ্ড হয়ে গেল, কেন বুঝতে পারো?
কবি। পারি বৈকি।
১ সৈনিক। পুরুতের হাতে, রাজার হাতে রথ চলল না, এর মানে কী।
কবি। ওরা ভুলে গিয়েছিল মহাকালের শুধু রথকে মানলেই হল না, মহাকালের রথের দড়িকেও মানা চাই।
১ সৈনিক। কবি, তোমার কথা শুনলে হঠাৎ মনে হয়, হয়তো বা একটা মানে আছে, খুঁজতে গেলে পাওয়া যায় না।
কবি। ওরা বাঁধন মানতে চায় নি, শুধু চলাকেই মেনেছিল। তাই রাগী বাঁধনটা উন্মত্ত হয়ে ওদের উপরে ল্যাজ আছড়াচ্ছে, গুঁড়িয়ে যাবে।
পুরোহিত। আর তোমার শূদ্রগুলোই কি এত বুদ্ধিমান যে দড়ির নিয়ম সামলে চলতে পারবে।