মন্ত্রী। কিন্তু সাবধানে রাস্তা বাঁচিয়ে চোলো। যে রাস্তায় বরাবর রথ চলেছে সেই রাস্তায়। আমাদের ঘাড়ের উপর এসে না পড়ে যেন।
দলপতি। রথের 'পরে রথী আছেন, রাস্তা তিনিই ঠাউরে নেবেন, আমরা তো বাহন, আমরা কী বা বুঝি। আয় রে সবাই। ঐ দেখছিস রথের চূড়ায় কেতনটা দুলে উঠেছে, স্বয়ং বাবার ইশারা। ভয় নেই, আয় সবাই।
পুরোহিত। ছুঁলে রে ছুঁলে! রশি ছুঁলে! ছি, ছি!
নাগরিকগণ। হায়, হায়, কী সর্বনাশ!
পুরোহিত। চোখ বোজ্ রে তোরা সব, সবাই চোখ বোজ্! ক্রুদ্ধ মহাকালের মূর্তি দেখলে তোরা ভস্ম হয়ে যাবি।
সৈনিক। ও কী ও! এ কি চাকারই শব্দ না কি? না আকাশ আর্তনাদ করে উঠল?
পুরোহিত। হতেই পারে না।
নাগরিক। ঐ তো নড়ল যেন।
সৈনিক। ধুলো উড়েছে যে। অন্যায়, ঘোর অন্যায়! রথ চলেছে! পাপ! মহাপাপ!
শূদ্রদল। জয়, জয় মহাকালের জয়!
পুরোহিত। তাই তো, এ কী কাণ্ড হল!
সৈনিক। ঠাকুর, হুকুম করো। আমাদের সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এই অপবিত্র রথ চলা বন্ধ করে দিই।
পুরোহিত। হুকুম করতে তো সাহস হয় না। বাবা স্বয়ং যদি ইচ্ছে করে জাত খোয়ান, আমাদের হুকুমে তার প্রায়শ্চিত্ত হবে না।
সৈনিক। তা হলে ফেলে দিই আমাদের অস্ত্র!
পুরোহিত। আর আমিও ফেলে দিই আমার পুঁথিপত্র!
নাগরিকগণ। আমরা যাই সব নগর ছেড়ে। মন্ত্রীমশায়, তুমি কী করবে। কোথায় যাচ্ছ।
মন্ত্রী। আমি যাচ্ছি ওদের সঙ্গে মিলে রশি ধরতে।
সৈনিক। ওদের সঙ্গে মিলবে?
মন্ত্রী। তা হলেই বাবা প্রসন্ন হবেন। স্পষ্ট দেখছি ওরা যে আজ তাঁর প্রসাদ পেয়েছে। এ তো স্বপ্ন নয়, মায়া নয়। ওদের থেকে পিছিয়ে পড়ে আজ কেউ মান রক্ষা করতে পারবে না, মান ওদের সঙ্গে থেকে।
সৈনিক। কিন্তু তাই বলে ওদের সঙ্গে সার মিলিয়ে রশি ধরা! ঠেকাবই ওদের। দলবল ডাকতে চললুম। মহাকালের রথের পথ রক্তে কাদা হয়ে যাবে।
পুরোহিত। আমিও তোমাদের সঙ্গে যাব, মন্ত্রণা দেবার কাজে লাগতে পারব।
মন্ত্রী। ঠেকাতে পারবে না। এবার দেখছি চাকার তলায় তোমাদেরই পড়তে হবে।
সৈনিক। তাই সই। বাবার রথের চাকা এতদিন যত সব চণ্ডালের মাংস খেয়ে অশুচি হয়ে আছে। আজ শুদ্ধ মাংস পাবে।
পুরোহিত। ঐ দেখো, ঐ দেখো মন্ত্রী! এরই মধ্যে রথটা রাজপথ থেকে নেমে পড়েছে। কোথায় কোন্ পল্লীর উপরে পড়বে কিছুই বলা যায় না।
সৈনিক। ঐ-যে ধনপতির দল ওখান থেকে চীৎকার করে আমাদের ডাকছে। রথটা যেন ওদেরই ভাণ্ডার লক্ষ্য করে চলেছে। ওরা ভয় পেয়ে গেছে। চলো চলো, ওদের রক্ষা করি গে।