চন্দ্রবাবু। আমাদের সভ্যকে অনেকেই পরিহাস করেন ; অনেকেই বলেন তোমরা দেশের কাজ করবার জন্য কৌমার্যব্রত গ্রহণ করছ, কিন্তু সকলেই যদি এই মহৎ প্রতিজ্ঞায় আবদ্ধ হয় তা হলে পঞ্চাশ বৎ সর পরে দেশে এমন মানুষ কে থাকবে যার জন্যে কোনো কাজ করা কারোও দরকার হবে। আমি প্রায়ই নম্র নিরুত্তরে এই - সকল পরিহাস বহন করি ; কিন্তু এর কি কোনো উত্তর নেই?
তিনি তাঁহার তিনটিমাত্র সভ্যের দিকে চাহিলেন
পূর্ণ।(নেপথ্যবাসিনীকে স্মরণ করিয়া সোৎসাহে)আছে বৈকি।সকল দেশেই একদল মানুষ আছে যারা সংসারী হবার জন্যে জন্মগ্রহণ করে নি, তাদের সংখ্যা অল্প। সেই কটিকে আকর্ষণ করে এক উদ্দেশ্য - বন্ধনে বাঁধবার জন্যে আমাদের এই সভা — সমস্ত জগতের লোককে কৌমার্যব্রতে দীক্ষিত করবার জন্যে নয়। আমাদের এই জাল অনেক লোককে ধরবে এবং অধিকাংশকেই পরিত্যাগ করবে, অবশেষে দীর্ঘকাল পরীক্ষার পর দুটি - চারটি লোক থেকে যাবে। যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে, তোমরাই কি সেই দুটি - চারটি লোক তবে স্পর্ধাপূর্বক কে নিশ্চয়রূপে বলতে পারে। হাঁ, আমরা জালে আকৃষ্ট হয়েছি এই পর্যন্ত, কিন্তু পরীক্ষায় শেষ পর্যন্ত টিঁকতে পারব কি না তা অন্তর্যামীই জানেন। কিন্তু আমরা টিঁকতে পারি বা না পারি, আমরা একে একে স্খলিত হই বা না হই, তাই বলে আমাদের এই সভাকে পরিহাস করবার অধিকার কারও নেই। কেবল যদি আমাদের সভাপতিমশায় একলামাত্র থাকেন, তবে আমাদের এই পরিত্যক্ত সভাক্ষেত্র সেই এক তপস্বীর তপঃপ্রভাবে পবিত্র উজ্জ্বল হয়ে থাকবে এবং তাঁর চিরজীবনের তপস্যার ফল দেশের পক্ষে কখনোই ব্যর্থ হবে না।
কুণ্ঠিত সভাপতি কার্যবিবরণের খাতাখানি পুনর্বার তাঁহার চোখের অত্যন্ত কাছে ধরিয়া অন্যমনস্কভাবে কী দেখিতে
লাগিলেন। কিন্তু পূর্ণর এই বক্তৃতা যথাস্থানে যথাবেগে গিয়া পৌঁছিল। চন্দ্রমাধববাবুর একাকী তপস্যার কথায়
নির্মলার চক্ষু ছল ছল করিয়া আসিল এবং বিচলিত বালিকার চাবির গোছার ঝনক শব্দ উৎকর্ণ পূর্ণকে পুরস্কৃত করিল
বিপিন। আমরা এ সভার যোগ্য কি অযোগ্য কালেই তার পরিচয় হবে, কিন্তু কাজ করাও যদি আমাদের উদ্দেশ্য হয় তবে সেটা কোনো - এক সময়ে শুরু করা উচিত। আমার প্রশ্ন এই, কী করতে হবে।
চন্দ্রবাবু। ( উৎ সাহিত হইয়া ) এই প্রশ্নের জন্য আমরা এতদিন অপেক্ষা করে ছিলাম, কী করতে হবে। এই প্রশ্ন যেন আমাদের প্রত্যেককে দংশন করে অধীর করে তোলে, কী করতে হবে। বন্ধুগণ, কাজই একমাত্র ঐক্যের বন্ধন। এক সঙ্গে যারা কাজ করে তারাই এক। এই সভায় আমরা যতক্ষণ সকলে মিলে একটা কাজে নিযুক্ত না হব ততক্ষণ আমরা যথার্থ এক হতে পারব না। অতএব বিপিনবাবু আজ এই - যে প্রশ্ন করছেন ‘কী করতে হবে', এই প্রশ্নকে নিবতে দেওয়া হবে না। সভ্যমহাশয়গণ, আপনারা উত্তর করুন কী করতে হবে।
শ্রীশ। ( অস্থির হইয়া ) আমাকে যদি জিজ্ঞাসা করেন ‘কী করতে হবে' আমি বলি আমাদের সকলকে সন্ন্যাসী হয়ে ভারতবর্ষের দেশে দেশে গ্রামে গ্রামে দেশহিতব্রত নিয়ে বেড়াতে হবে, আমাদের দলকে পুষ্ট করে তুলতে হবে, আমাদের সভাটিকে সূক্ষ্ম সূত্র স্বরূপ করে সমস্ত ভারতবর্ষকে গেঁথে ফেলতে হবে।
বিপিন। ( হাসিয়া ) সে ঢের সময় আছে, যা কালই শুরু করা যেতে পারে এমন একটা - কিছু কাজ বলো। ‘মারি তো