অক্ষয়। মাথা খাওয়ার কথা যদি বললে, আমি নিজের মাথাটি খেয়ে অবধি বুঝেছি ওটা সুখাদ্যের মধ্যে গণ্য নয়। আর ঐ কাব্য লেখা, ও কার্যটাও সুসাধ্য বলে জ্ঞান করি নে। বুদ্ধিতে আমার এক জায়গায় ফুটো আছে, কাব্য জমতে পারে না— ফস্ ফস্ করে বেরিয়ে পড়ে।
তুমি জান আমার গাছে ফল কেন না ফলে —
যেমনি ফুলটি ফুটে ওঠে আনি চরণতলে।
কিন্তু, আমার প্রশ্নের তো কোনো উত্তর পেলুম না? কৌতূহলে মরে যাচ্ছি। কাশীতে যে চলেছ,উৎসাহটা কিসের জন্যে। আপাতত সেই বিষ্ণুদূতটাকে মনে মনে ক্ষমা করলুম, কিন্তু ভগবান ভূতনাথ ভবানীপতির অনুচরগুলোর উপর ভারি সন্দেহ হচ্ছে। শুনেছি নন্দী ও ভৃঙ্গী অনেক বিষয়ে আমাকেও জেতে, ফিরে এসে হয়তো এই ভৃত্যটিকে পছন্দ না হতেও পারে।
পুরবালা। আমি কাশী যাব না।
অক্ষয়। সে কী কথা। ভূতভাবনের যে ভৃত্যগুলি একবার মরে ভূত হয়েছে তারা যে দ্বিতীয়বার মরবে।
রসিকের প্রবেশ
পুরবালা। আজ যে রসিকদার মুখ ভারি প্রফুল্ল দেখাচ্ছে।
রসিক। ভাই, তোর রসিকদার মুখের ঐ রোগটা কিছুতেই ঘুচল না। কথা নেই বার্তা নেই প্রফুল্ল হয়েই আছে বিবাহিত লোকেরা দেখে মনে মনে রাগ করে।
পুরবালা। শুনলে তো বিবাহিত লোক? এর একটা উপযুক্ত জবাব দিয়ে যাও।
অক্ষয়। আমাদের প্রফুল্লতার খবর ও বৃদ্ধ কোথা থেকে জানবে? সে এত রহস্যময় যে তা উদ্ভেদ করতে আজ পর্যন্ত কেউ পারলে না, সে এত গভীর যে আমরাই হাতড়ে খুঁজে পাই নে — হঠাৎ সন্দেহ হয় আছে কি না।
পুরবালা। এই বুঝি!
রাগ করিয়া চলিয়া যাইবার উপক্রম
অক্ষয়। ( তাহাকে ফিরাইয়া ) দোহাই তোমার, এ লোকটির সামনে রাগারাগি কোরো না — তা হলে ওর আস্পর্ধা আরো বেড়ে যাবে। দেখো দাম্পত্যতত্ত্বানভিজ্ঞ বৃদ্ধ, আমরা যখন রাগ করি তখন স্বভাবত আমাদের কণ্ঠস্বর প্রবল হয়ে ওঠে, সেইটেই তোমাদের কর্ণগোচর হয় ; আর অনুরাগে যখন আমাদের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসে, কানের কাছে মুখ আনতে গিয়ে মুখ বারংবার লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে পড়তে থাকে — তখন তো খবর পাও না।
পুরবালা। আঃ, চুপ করো।
অক্ষয়। যখন গয়নার ফর্দ হয় তখন বাড়ির সরকার থেকে সেক্রা পর্যন্ত সেটা কারও অবিদিত থাকে না, কিন্তু বসন্তনিশীথে যখন প্রেয়সী —
পুরবালা। আঃ, থামো।
অক্ষয়। বসন্তনিশীথে প্রেয়সী —
পুরবালা। আঃ, কী বকছ তার ঠিক নেই।