নীরবালা। বল কী রসিকদাদা। তা হলে এখানে আমাদের রোজ রোজ নতুন নতুন নমুনো দেখা বন্ধ?
নৃপবালা। তোর এখনো শখ আছে নাকি।
নীরবালা। এ কি শখের কথা হচ্ছে। এ হচ্ছে শিক্ষা। রোজ রোজ অনেকগুলি দৃষ্টান্ত দেখতে দেখতে জিনিসটা সহজ হয়ে আসবে; যেটিকে বিয়ে করবি সেই প্রাণীটিকে বুঝতে কষ্ট হবে না।
নৃপবালা। তোমার প্রাণীকে তুমি বুঝে নিয়ো, আমার জন্যে তোমার ভাবতে হবে না।
নীরবালা। সেই কথাই ভালো— তুইও নিজের জন্যে ভাবিস, আমিও নিজের জন্যে ভাবব, কিন্তু রসিকদাদাকে আমাদের জন্যে ভাবতে দেওয়া হবে না।
শৈলবালা। রসিকদাদা, তোমার সঙ্গে আমার পরামর্শ আছে।
অক্ষয়। অ্যাঁ, শৈল, এই বুঝি! আজ রসিকদা হলেন রাজমন্ত্রী! আমাকে ফাঁকি!
শৈলবালা। (হাসিয়া) তোমার সঙ্গে আমার কি পরামর্শের সম্পর্ক মুখুজ্জেমশায়। পরামর্শ যে বুড়ো না হলে হয় না।
অক্ষয়। তবে রাজমন্ত্রীপদের জন্যে আমার দরবার উঠিয়ে নিলুম।
আমি কেবল ফুল জোগাব
তোমার দুটি রাঙা হাতে,
বুদ্ধি আমার খেলে নাকো
পাহারা বা মন্ত্রণাতে।
শৈলবালা। রসিকদাদা, আমরা যে চিরকুমার-সভার সভ্য হব— তুমি আমার বাহন হবে।
রসিক। ভগবান হরি নারীছদ্মবেশে পুরুষকে ভুলিয়েছিলেন, তুই শৈল যদি পুরুষ ছদ্মবেশে পুরুষকে ভোলাতে পারিস তা হলে হরিভক্তি উড়িয়ে দিয়ে তোর পুজোতেই শেষ বয়সটা কাটাব। কিন্তু, মা যদি টের পান?
শৈলবালা। তিন কন্যাকে কেবলমাত্র স্মরণ করেই মা মনে মনে এত অস্থির হয়ে ওঠেন যে, তিনি আমাদের আর খবর রাখতে পারেন না। তাঁর জন্যে ভেবো না।
রসিক। কিন্তু, সভায় কিরকম করে সভ্যতা করতে হয় সে আমি কিছুই জানি নে।
শৈলবালা। আচ্ছা, সে আমি চালিয়ে নেব। আবেদনপত্রের সঙ্গে প্রবেশিকার দশটা টাকা পাঠিয়ে দিয়ে বসে আছি। রসিকদা, তোমার তো মার সঙ্গে কাশী গেলে চলবে না।
অক্ষয়। মার সঙ্গে কাশী যাবার জন্যে আমি লোক ঠিক করে দেব এখন, সেজন্যে ভাবনা নেই।
শৈলবালা। মুখুজ্জেমশায়, তুমি তাদের কী বানর বানিয়েই ছেড়ে দিলে— শেষ কালে বেচারাদের জন্যে আমার মায়া করছিল।
অক্ষয়। বানর কেউ বানাতে পারে না শৈল, ওটা পরমা প্রকৃতি নিজেই বানিয়ে রাখেন। ভগবানের বিশেষ অনুগ্রহ থাকা চাই। যেমন কবি হওয়া আর-কি। লেজই বল কবিত্বই বল ভিতরে না থাকলে জোর করে টেনে বের করবার জো নেই।