
কদম ঝরে, হায় হায় হায়।
পুব হাওয়া কয়, ওর তো সময় নাই বাকি আর।
শরৎ বলে, যাক-না সময় ভয় কিবা তার, —
কাটবে বেলা আকাশমাঝে বিনা কাজে
অসময়ের খেলা খেলে।
কালো মেঘের আর কি আছে দিন
ও যে হল সাথীহীন।
পুব হাওয়া কয়, কালোর এবার যাওয়াই ভালো,
শরৎ বলে, গেঁথে দেব কালোয় আলো।
সাজবে বাদল আকাশ-মাঝে
সোনার সাজে
কালিমা ওর মুছে ফেলে।
যার রে শ্রাবণকবি রসবর্ষা ক্ষান্ত করি তার,
কদম্বের রেণুপুঞ্জে পদে পদে কুঞ্জবীথিকার
ছায়াঞ্চল ভরি দিল। জানি, রেখে গেল তার দান
বনের মর্মের মাঝে ; দিয়ে গেল অভিষেকস্নান
সুপ্রসন্ন আলোকেরে ; মহেন্দ্রের অদৃশ্য বেদীতে
ভরি গেল অর্ঘ্যপাত্র বেদনার উৎ সর্গ অমৃতে ;
সলিল গণ্ডূষ দিতে তটিনী সাগরতীর্থে চলে,
অঞ্জলি ভরিল তারি ; ধরার নিগূঢ় বক্ষতলে
রেখে গেল তৃষ্ণার সম্বল ; অগ্নিতীক্ষ্ম বজ্রবাণ
দিগন্তের তূণ ভরি একান্তে করিয়া গেল দান
কালবৈশাখীর তরে ; নিজ হস্তে সর্ব ম্লানতার
চিহ্ন মুছে দিয়ে গেল। আজ শুধু রহিল তাহার
রিক্তবৃষ্টি জ্যোতিঃশুভ্র মেঘে মেঘে মুক্তির লিখন,
আপন পূর্ণতাখানি নিখিলে করিল সমর্পণ।