বটু! ঠাকুর, দিন তো গেল, অন্ধকার হয়ে এল।
ধনঞ্জয়। বাবা, বাইরের আলোর উপর ভরসা রাখাই অভ্যাস, তাই অন্ধকার হলেই
একেবারে অন্ধকার দেখি।
বটু। ভেবেছিলুম,ভৈরবের নৃত্য আজই আরম্ভ হবে, কিন্তু যন্ত্ররাজ কি তাঁরও
হাত পা যন্ত্র দিয়ে বেঁধে দিলে?
ধনঞ্জয়। ভৈরবের নৃত্য যখন সবে আরম্ভ হয় তখন চোখে পড়ে না। যখন শেষ হবার
পালা আসে তখন প্রকাশ হয়ে পড়ে।
বটু। ভরসা দাও, প্রভু, বড়ো ভয় ধরিয়েছে। জাগো, ভৈরব, জাগো! আলো নিবেছে, পথ
ডুবেছে, সাড়া পাই নে মৃত্যুঞ্জয়! ভয়কে মারো ভয় লাগিয়ে। জাগো, ভৈরব, জাগো!
[ প্রস্থান
উত্তরকূটের নাগরিকদলের প্রবেশ
১। মিথ্যে কথা। রাজধানীর গারদে সে নেই। ওকে লুকিয়ে রেখেছে।
২। দেখব কোথায় লুকিয়ে রাখে।
ধনঞ্জয়। না, বাবা, কোথাও পারবে না লুকিয়ে রাখতে। পড়বে দেয়াল, ভাঙবে দরজা,
আলো ছুটে বের হয়ে আসবে— সমস্ত প্রকাশ হয়ে পড়বে।
১। এ আবার কে রে? বুকের ভিতরটায় হঠাৎ চমকিয়ে দিলে।
৩। তা বেশ হয়েছে। একজন কাউকে চাই। তা, এই বৈরাগীটাকেই ধর্। ওকে বাঁধ্।
ধনঞ্জয়। যে মানুষ ধরা দিয়ে বসে আছে তাকে ধরবে কী করে?
১। সাধুগিরি রাখো, আমরা ও-সব মানি নে।
ধনঞ্জয়। না মানাই তো ভালো। প্রভু স্বয়ং হাতে ধরে তোমাদের মানিয়ে নেবেন।
তোমরা ভাগ্যবান। আমি যে-সব অভাগাদের জানি তারা কেবল মেনে মেনেই গুরুকে
খোয়ালে। আমাকে সুদ্ধ তারা মানার তাড়ায় দেশছাড়া করেছে।
১। তাদের গুরু কে?
ধনঞ্জয়। যার হাতে তারা মার খায়।
১। তা হলে তোমার উপর গুরুগিরি আমরাই শুরু করি-না কেন?
ধনঞ্জয়। রাজি আছি, বাবা। দেখে নিই ঠিকমত পাঠ দিতে পারি কি না। পরীক্ষা হোক।
২। সন্দেহ হচ্ছে তুমিই আমাদের যুবরাজকে নিয়ে কিছু চালাকি করেছ।
ধনঞ্জয়। তোমাদের যুবরাজ আমার চেয়েও চালাক, তাঁর চালাকি আমাকে নিয়ে।
২। দেখলি তো, কথাটার মানে আছে। দুজনে একটা কী ফন্দি চলছে।
১। নইলে এত রাত্রে এখানে ঘুরে বেড়ায় কেন? যুবরাজকে শিবতরাইয়ে সরাবার
চেষ্টা। এইখানেই ওকে বেঁধে রেখে যাই। তার পরে যুবরাজের সন্ধান পেলে ওর
সঙ্গে বোঝাপড়া করব। ওহে, কুন্দন, বাঁধো-না। দড়িগাছটা তো তোমার কাছেই আছে।
কুন্দন। এই নাও-না দড়ি, তুমিই বাঁধো-না।
২। ওরে, তোরা কি উত্তরকূটের মানুষ? দে, আমাকে দে। (বাঁধিতে বাঁধিতে) কেমন
হে, গুরু কী বলছেন?
ধনঞ্জয়। কষে চেপে ধরেছেন, সহজে ছাড়ছেন না।