সঞ্জয়। মন্ত্রী, এ তো তোমার নিজের কথা বলে শোনাচ্ছে না, এ যেন যুবরাজের মুখের কথা।
মন্ত্রী। তাঁর কথা এখানকার হাওয়ায় ছড়িয়ে আছে, ব্যবহার করি, অথচ ভুলে যাই তাঁর কি আমার।
সঞ্জয়। কিন্তু কথাটি মনে করিয়ে দিয়ে ভালো করেছ, দূর থেকে তাঁরই কাজ করব। যাই মহারাজের কাছে।
মন্ত্রী। কী করতে?
সঞ্জয়। শিবতরাইয়ের শাসনভার প্রার্থনা করব।
মন্ত্রী। সময় যে বড়ো সংকটের, এখন কি—
সঞ্জয়। সেইজন্যেই এই তো উপযুক্ত সময়।
বিশ্বজিৎ। ও কে ও? উদ্ধব বুঝি?
উদ্ভব। হাঁ, খুড়া মহারাজ।
বিশ্বজিৎ। অন্ধকারের জন্যে অপেক্ষা করছিলুম— আমার চিঠি পেয়েছ তো?
উদ্ধব। পেয়েছি।
বিশ্বজিৎ। সেই মতো কাজ হয়েছে?
উদ্ভব। অল্প পরেই জানতে পারবে। কিন্তু—
বিশ্বজিৎ। মনে সংশয় করো না। মহারাজ ওকে নিজে মুক্তি দিতে প্রস্তুত নন, কিন্তু তাঁকে না জানিয়ে কোনো উপায়ে আর কেউ যদি একাজ সাধন করে তা হলে তিনি বেঁচে যাবেন।
উদ্ধব। কিন্তু সেই আর-কেউকে কিছুতে ক্ষমা করবেন না।
বিশ্বজিৎ। আমার সৈন্য আছে, তারা তোমাকে আর তোমার প্রহরীদের বন্দী করে নিয়ে যাবে। দায় আমারই।
নেপথ্যে। আগুন, আগুন!
উদ্ধব। ঐ হয়েছে। বন্দিশালার সংলগ্ন পাকশালার তাঁবুতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। এই সুযোগে বন্দী-দুটিকে বের করে দিই।
অভিজিৎ। এ কী! দাদামশায় যে!
বিশ্বজিৎ। তোমাকে বন্দী করতে এসেছি। মোহনগড়ে যেতে হবে।
অভিজিৎ। আমাকে আজ কিছুতেই বন্দী করতে পারবে না— না ক্রোধে, না স্নেহে। তোমরা ভাবছ তোমরাই আগুন লাগিয়েছ? না, এ আগুন যেমন করেই হোক লাগত। আজ আমার বন্দী থাকবার অবকাশ নেই।
বিশ্বজিৎ। কেন, ভাই, কী তোমার কাজ?
অভিজিৎ। জন্মকালের ঋণ শোধ করতে হবে। স্রোতের পথ আমার ধাত্রী, তার বন্ধন মোচন করব।
বিশ্বজিৎ। তার অনেক সময় আছে, আজ নয়।