নবীন। দাদা, ওখানে একবার কি তোমার নিজে যাওয়া উচিত হবে না? তুমি আপনি গিয়ে যদি বল তা হলে বউরানী খুশি হবেন।
গুড়গুড়ি টেনে
মধুসূদন। আচ্ছা, কাল রবিবার আছে, কাল যাব।
[ শ্যামাসুন্দরী ও মধুসূদনের প্রস্থান
মোতির মা'র প্রবেশ
মোতির মা। তোমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছি।
নবীন। পলকে পলকে হারাচ্ছ! প্রয়োজনটা কী?
মোতির মা। আমার প্রয়োজন নয়, তোমারই প্রয়োজন। তোমার খাবার যে ঠাণ্ডা হয়ে এল।
নবীন। আমার মনটাও সেইরকম।
মোতির মা। কেন বলো তো?
নবীন। দৈবাৎ একটা ভালো কাজ করে ফেলেছি।
মোতির মা। আমার পরামর্শ না নিয়েই?
নবীন। পরামর্শ নেবার সময় ছিল না।
মোতির মা। তা হলে তো দেখছি তোমাকে পস্তাতে হবে।
নবীন। অসম্ভব নয়। কুষ্টিতে আমার বুদ্ধিস্থানে আর কোনো গ্রহ নেই, আছেন নিজের স্ত্রী। এইজন্যে সর্বদা তোমাকে হাতের কাছে রেখেই চলি। ব্যাপারটা হচ্ছে এই — দাদা আজ হুকুম করলেন, বউরানীকে আনানো চাই। আমি ফস্ করে বলে বসলেম, তুমি নিজে গিয়ে যদি কথাটা তোল ভালো হয়। দাদা কী মেজাজে ছিলেন, রাজি হয়ে গেলেন। তার পর থেকেই ভাবছি, এর ফলটা কী হবে।
মোতির মা। ভালো হবে না। বিপ্রদাসবাবুর যেরকম ভাবখানা দেখলুম, কী বলতে কী বলবেন, শেষকালে কুরুক্ষেত্রের লড়াই বেধে যাবে। এমন কাজ করলে কেন?
নবীন। প্রথম কারণ, বুদ্ধির কোঠা ঠিক সেই সময়টাতেই শূন্য ছিল, তুমি ছিলে অন্যত্র। দ্বিতীয় হচ্ছে, সেদিন বউরানী যখন বললেন, ‘ আমি যাব না ', তার ভিতরকার মানেটা বুঝেছিলুম। তাঁর দাদা রুগ্ণ শরীর নিয়ে কলকাতায় এলেন, তবু এক দিনের জন্যে মহারাজ দেখতে গেলেন না — এই অনাদরটা তাঁর মনে সব চেয়ে বেজেছিল।
নিজের বুদ্ধিতে কথাটা আমার হয়তো মনে আসত না — তুমিই আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছিলে।
মোতির মা। কীরকম শুনি?
নবীন। ওই-যে সেদিন বললে, কুটুম্বিতার দায়িত্ব আত্মমর্যাদার দায়িত্বের চেয়েও বড়ো। তাই মনে করতে সাহস হল যে, মহারাজার মতো অত বড়ো লোকেরও বিপ্রদাসবাবুকে দেখতে যাওয়া উচিত।
মোতির মা। কাজের সময় এত বাজে কথাও বলতে পার! কী করা উচিত এখন সেই কথাটা ভাবো দেখি।