মোতির মা। দেখো, আমার কাছে অত বাড়াবাড়ি করতে তোমার একটুও ভয় নেই?
নবীন। ভয় যদি থাকত তা হলেই তোমার ভাবনার কথাও থাকত। ওঁকে দেখে আমার আশ্চর্য কিছুতে ভাঙে না। মনে করি আমাদের ভাগ্যে এটা সম্ভব হল কী করে? আমি যে ওঁকে বউরানী বলতে পারছি এ ভাবলে গায়ে কাঁটা দেয়। আর উনি যে সামান্য নবীনের মতো মানুষকেও হাসিমুখে কাছে বসিয়ে খাওয়াতে পারেন, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে এও এত সহজ হল কী করে? আমাদের পরিবারের মধ্যে সব চেয়ে হতভাগ্য আমার দাদা। যাকে সহজে পেলেন তাকে কঠিন করে বাঁধতে গিয়েই হারালেন।
মোতির মা। বাস্ রে, বউরানীর কথায় তোমার মুখ যখন খুলে যায় তখন থামতে চায় না।
নবীন। মেজোবউ, জানি তোমার মনে একটুখানি বাজে।
মোতির মা। না, কখ্খনো না।
নবীন। হাঁ, অল্প একটু! কিন্তু এই উপলক্ষে একটা কথা মনে করিয়ে দেওয়া ভালো। নুরনগরে স্টেশনে প্রথম বউরানীর দাদাকে দেখে যে-সব কথা বলেছিলে, চলতি ভাষায় তাকেও বাড়াবাড়ি বলা চলে।
মোতির মা। আচ্ছা, আচ্ছা, ও-সব তর্ক থাক্, এখন কী বলতে চাচ্ছিলে বলো।
নবীন। আমার বিশ্বাস, আজকালের মধ্যেই দাদা বউরানীকে ডেকে পাঠাবেন। বউরানী যে এত আগ্রহে বাপের বাড়ি চলে এলেন, আর তার পর থেকে এতদিন ফেরবার নাম নেই, এতে দাদার প্রচণ্ড অভিমান হয়েছে তা জানি। দাদা কিছুতেই বুঝতে পারেন না সোনার খাঁচাতে পাখির কেন লোভ নেই। নির্বোধ পাখি! অকৃতজ্ঞ পাখি!
মোতির মা। তা ভালোই তো, বড়োঠাকুর ডেকেই পাঠান-না। সেই কথাই তো ছিল।
নবীন। আমার মনে হয়, ডাকবার আগেই বউরানী যদি যান ভালো হয়, দাদার ওইটুকু অভিমানের নাহয় জিত রইল। তা ছাড়া বিপ্রদাসবাবু তো চান বউরানী তাঁর সংসারে ফিরে যান, আমিই নিষেধ করেছিলুম।
দরজার বাইরে থেকে
কুমুদিনী। ঘরে ঢুকব কি?
মোতির মা। তোমার ঠাকুরপো পথ চেয়ে আছেন।
কুমুদিনীর প্রবেশ
নবীন। জন্ম জন্ম পথ চেয়ে ছিলুম, এইবার দর্শন পেলুম।
কুমুদিনী। আঃ ঠাকুরপো, এত কথা তুমি বানিয়ে বলতে পার কী করে?
নবীন। নিজেই আশ্চর্য হয়ে যাই, বুঝতে পারি নে।
কুমুদিনী। আচ্ছা, চলো এখন খেতে যাবে।
নবীন। খাবার আগে একবার তোমার দাদার সঙ্গে কিছু কথাবার্তা কয়ে আসি গে।
কুমুদিনী। না, সে হবে না।
নবীন। কেন?
কুমুদিনী। আজ দাদা অনেক কথা বলেছেন, আজ আর নয়।
নবীন। ভালো খবর আছে।