কুমুদিনী। কিসের লড়াই দাদা!
বিপ্রদাস। যে সমাজ নারীকে তার মূল্য দিতে এত বেশি ফাঁকি দিয়েছে তার সঙ্গে লড়াই।
কুমুদিনী। তুমি তার কী করতে পার দাদা?
বিপ্রদাস। আমি তাকে না মানতে পারি। তা ছাড়া আরো আরো কী করতে পারি সে আমাকে ভাবতে হবে, আজ থেকেই শুরু হল কুমু! এই বাড়িতে তোর জায়গা আছে, সে সম্পূর্ণ তোর নিজের, আর-কারো সঙ্গে আপস করে নয়। এইখানেই তুই নিজের জোরে থাকবি।
কুমুদিনী। আচ্ছা দাদা, সে হবে, কিন্তু আর তুমি কথা কোয়ো না। তুমি একটুখানি মাথায় জল দিয়ে এসো গে।
[ বিপ্রদাসের প্রস্থান
[ কুমুদিনী ]
মোতির মার প্রবেশ
কুমুদিনী। একি? তুমি যে!
কানে কানে কী বলবার পর
মোতির মা। বাড়িকে ভূতে পেয়েছে বউরানী। ওখানে টিকে থাকা দায়। তুমি কি যাবে না?
কুমুদিনী। আমার কি ডাক পড়েছে?
মোতির মা। না, ডাকবার কথা বোধ হয় মনেও নেই। কিন্তু তুমি না গেলে তো চলবে না।
কুমুদিনী। আমার কী করবার আছে? আমি তো তাঁকে তৃপ্ত করতে পারব না। ভেবে দেখতে গেলে আমার জন্যেই সমস্ত কিছু হয়েছে, অথচ কোনো উপায় ছিল না। আমি যা দিতে পারতুম সে তিনি নিতে পারলেন না। আজ আমি শূন্য হাতে গিয়ে কী করব?
মোতির মা। বল কী বউরানী, সংসার যে তোমারই, সে তো তোমার হাতছাড়া হলে চলবে না।
কুমুদিনী। সংসার বলতে কী বোঝ ভাই? ঘরদুয়োর, জিনিসপত্র, লোকজন? লজ্জা করে এ কথা বলতে যে, তাতে আমার অধিকার আছে। অধিকার অন্তরে খুইয়েছি, এখন কি ওই-সব বাইরের জিনিস নিয়ে লোভ করা চলে?
মোতির মা। কী বলছ ভাই বউরানী? ঘরে কি তুমি একেবারেই ফিরবে না?
কুমুদিনী। সব কথা ভালো করে বুঝতে পারছি নে। আর কিছুদিন আগে হলে ঠাকুরের কাছে সংকেত চাইতুম, দৈবজ্ঞের কাছে শুধোতে যেতুম। কিন্তু আমার সে-সব ভরসা ধুয়ে মুঝে গেছে। আরম্ভে সব লক্ষ্মণই তো ভালো ছিল। শেষে কোনোটাই তো একটুও খাটল না। আজ কতবার বসে বসে ভেবেছি, দেবতার চেয়ে দাদার বিচারের উপর ভর করলে এত বিপদ ঘটত না। তবুও, মনের মধ্যে যে দেবতাকে নিয়ে দ্বিধা উঠেছে, হৃদয়ের মধ্যে তাঁকে এড়াতে পারি নে। ফিরে ফিরে সেইখানে এসে লুটিয়ে পড়ি।
মোতির মা। তোমার কথা শুনে যে ভয় লাগে। ঘরে কি যাবেই না?