নবীন। আমার পরিচয়টা পান নি বোধ হচ্ছে। মনে করেছেন আমি রাজবাড়ির কোন্ আদুরে ছেলে। যিনি আপনার ছোটো বোন, আমি তাঁর অধম সেবক, আমাকে সম্মান করে আমায় আশীর্বাদটা ফাঁকি দেবেন না। কিন্তু করেছেন কী? আপনার অমন শরীরের কেবল ছায়াটি বাকি রেখেছেন?
বিপ্রদাস। শরীরটা সত্য নয়, ছায়া, মাঝে মাঝে সে খবরটা পাওয়া ভালো। ওতে শেষের পাঠ এগিয়ে থাকে।
কুমুদিনীর প্রবেশ
কুমুদিনী। ঠাকুরপো, চলো, কিছু খাবে।
নবীন। খাব, কিন্তু একটা শর্ত আছে। যতক্ষণ পূরণ না হবে, ব্রাহ্মণ অতিথি অভুক্ত তোমার দ্বারে পড়ে থাকবে।
কুমুদিনী। শর্তটা কী শুনি?
নবীন। আমাদের বাড়িতে থাকতেই দরবার জানিয়ে রেখেছিলুম কিন্তু সেখানে জোর পাই নি। ভক্তকে একখানি ছবি তোমায় দিতে হবে। সেদিন বলেছিলে নেই, আজ তা বলবার জো নেই, তোমার দাদার ঘরের দেয়ালে ওই তো সামনেই ঝুলছে।
বুঝতে পারছেন, বিপ্রদাসবাবু। বউরানীর দয়া হয়েছে। দেখুন-না ওঁর চোখের দিকে চেয়ে। অযোগ্য বলেই আমার প্রতি ওঁর একটু বিশেষ করুণা।
হেসে
বিপ্রদাস। কুমু, আমার ওই চামড়ার বাক্সয় আরো খান-কয়েক ছবি আছে, তোর ভক্তকে বরদান করতে চাস যদি তো অভাব হবে না।
আর-একটি কাজ কর্— ও ঘরে আমার বইগুলো একটু গুছিয়ে দে।
[ কুমুদিনীর প্রস্থান
কুমু তোমাকে স্নেহ করে।
নবীন। তা করেন। বোধ করি আমি অযোগ্য বলেই ওঁর স্নেহ এত বেশি।
বিপ্রদাস। তাঁর সম্বন্ধে তোমাকে কিছু বলতে চাই, তুমি আমাকে কোনো কথা লুকিয়ো না।
নবীন। কোনো কথা আমার নেই যা আপনাকে বলতে আমার বাধবে।
বিপ্রদাস। কুমু যে এখানে এসেছে, আমার মনে হচ্ছে তার মধ্যে যেন বাঁকা কিছু আছে।
নবীন। আপনি ঠিকই বুঝেছেন। যাঁর অনাদর কল্পনা করা যায় না, সংসারে তাঁরও অনাদর ঘটে।
বিপ্রদাস। অনাদর ঘটেছে তবে?
নবীন। সেই লজ্জায় এসেছি। আর তো কিছুই পারি নে, পায়ের ধুলো নিয়ে মনে মনে মাপ চাই।
বিপ্রদাস। কুমু যদি আজই স্বামীর ঘরে ফিরে যায় তাতে ক্ষতি আছে কি?
নবীন। সত্যি কথা বলি, যেতে বলতে সাহস করি নে।
বিপ্রদাস। একখানা বেনামী চিঠি পেয়েছিলুম। বেনামী বলে শ্রদ্ধা করে পড়ি নি। এই সেই চিঠি। এখন বোধ হচ্ছে সব কথা সত্যি।