ঠাকুরদাদা। ভয় নেই তোমার।
লক্ষেশ্বর। ভয় না থাকলেও তবু ভয় ঘোচে কই? যা হোক ঠাকুর, একা ঠাকুর্দাকে নিয়ে অতবড়ো কাজটা চলবে না। আমরা নাহয় তিন জনেই অংশীদার হব। ঠাকুর্দা আমাকে ফাঁকি দিয়ে জিতে নেবে সেটি হচ্ছে না। আচ্ছা ঠাকুর, তবে আমিও তোমার চেলা হতে রাজি হলেম।—ওই-যে ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষ আসছে। ঐ দেখছ না দূরে? আকাশে যে ধুলো উড়িয়ে দিয়েছে! সবাই খবর পেয়েছে স্বামী অর্পূবানন্দ এসেছেন। এবার পায়ের ধুলো নিয়ে তোমার পায়ের তেলো হাঁটু পর্যন্ত খইয়ে দেবে। যাই হোক, তুমি যেরকম আলগা মানুষ দেখছি, সেই কথাটা আর কারো কাছে ফাঁস কোরো না—অংশীদার আর বাড়িয়ো না। কিন্তু ঠাকুর্দা, লাভ-লোকসানের ঝুঁকি তোমাকেও নিতে হবে; অংশীদার হলেই হয় না; সব কথা ভেবে দেখো।
সন্ন্যাসী। ঠাকুর্দা, আর তো দেরি করলে চলবে না। লোকজন জুটতে আরম্ভ করেছে, ‘পুত্র দাও’ ‘ধন দাও’ করে আমাকে একেবারে মাটি করে দেবে। ছেলেগুলিকে এইবেলা ডাকো। তারা ধন চায় না, পুত্র চায় না, তাদের সঙ্গে খেলা জুড়ে দিলেই পুত্রধনের কাঙালরা আমাকে ত্যাগ করবে।
ঠাকুরদাদা। ছেলেদের আর ডাকতে হবে না। ঐ-যে আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। এল বলে।
লক্ষেশ্বর। না বাবা, আমি পারব না! ভালো বুঝতে পারছি নে। ও-সব আমার কাজ নেই—আমার যা আছে সেই ভালো। কিন্তু, তুমি আমাকে কী যেন মন্ত্র করেছ! তোমার কাছ থেকে না পালালে আমার তো রক্ষে নেই। তুমি ঠাকুর্দাকে নিয়েই কারবার করো, আমি চললেম।
ছেলেরা। সন্ন্যাসীঠাকুর! সন্ন্যাসীঠাকুর!
সন্ন্যাসী। কী বাবা!
ছেলেরা। তুমি আমাদের নিয়ে খেলো।
সন্ন্যাসী। সে কি হয় বাবা? আমার কি সে ক্ষমতা আছে? তোমরা আমাকে নিয়ে খেলাও।
ছেলেরা। কী খেলা খেলবে?
সন্ন্যাসী। আমরা আজ শারদোৎসব খেলব।
প্রথম বালক। সে বেশ হবে।
দ্বিতীয় বালক। সে বেশ মজা হবে।
তৃতীয় বালক। সে কী খেলা ঠাকুর?
চতুর্থ বালক। সে কেমন করে খেলতে হয়?