পৃথিবী-সুদ্ধ লোকের উপর রেগে উঠছেন। অথচ হুঁশ নেই যে লক্ষ্মী-বিদেয় নিজেই করে বসে আছেন।
কুমুদিনীর প্রবেশ
[ নবীন ]। বৌদি, বিদায় নেব, পায়ের ধুলো দাও।
কুমুদিনী। কেন ভাই।
নবীন। তোমাকে সেবা করতে পারব এই খুশিতে বুক ভরে উঠেছিল। কিন্তু নবীনের কপালে এতটা সৌভাগ্য সইবে কেন? ক'টা দিন মাত্র তোমাকে পেয়েছি, কিছুই করতে পারি নি, এই আফসোসটাই মনে রয়ে গেল।
কুমুদিনী। কোথায় যাচ্ছ তোমরা?
নবীন। দাদা আমাদের দেশেই পাঠাবে। এখানে আর আমাদের সইল না।
কুমুদিনী। তোমাদের সঙ্গে আমিও যাব।
মোতির মা। তোমাকে নিয়ে যাবার সাধ্য কী দিদি?
কুমুদিনী। কেন?
মোতির মা। বড়োঠাকুর তা হলে আমাদের মুখ দেখবেন না।
কুমুদিনী। তা হলে আমারও দেখবেন না।
মোতির মা। কিন্তু দিদি, তোমার জন্যে এ শাস্তি নয়, এ যে আমাদের নিজেদের পাপের জন্যে।
কুমুদিনী। কিসের পাপ তোমাদের?
মোতির মা। আমরাই তো খবর দিয়েছি তোমাকে।
কুমুদিনী। আমি যদি খবর জানতে চাই তা হলে খবর দেওয়াটা অপরাধ?
নবীন। কর্তাকে না জানিয়ে দেওয়াটা অপরাধ।
কুমুদিনী। তাই ভালো। অপরাধ তোমরাও করেছ, আমিও করেছি। একসঙ্গেই ফলভোগ করব। ঠাকুরপো, দ্বিধা কোরো না, আমারও যাবার আয়োজন করো।
নবীন। আচ্ছা, দেখি ব'লে, দাদা কী বলেন।
[ প্রস্থান
মোতির মা। দিদি, এটা একটা ভুল হবে না তো?
কুমুদিনী। কোন্টা?
মোতির মা। এই ছেড়ে চলে যাওয়া?
কুমুদিনী। তাড়িয়েই যদি দেয় তো কী করব?
মোতির মা। কিন্তু দিদি —
কুমুদিনী। না ভাই, এর মধ্যে আর কিন্তু নেই। এ শাস্তি আমাকেই দেওয়া হয়েছে। আমি যাদের স্নেহ করি একে একে তাদের সরিয়ে দিয়ে ভেবেছেন আমাকে পাবেন সম্পূর্ণ করে। কিন্তু তাই কি কখনো হয়? একটা জিনিসকে টুকরো টুকরো করে ভেঙে ফেললে পাবার মতো তাতে বাকি থাকে কী? আমার দুর্ভাগ্য! দেবার মতো করে যখনি থালা সাজিয়ে নৈবেদ্য গড়ে তুলেছি তখনি কে যেন ধাক্কা দিয়ে আমার নৈবেদ্য ছারখার করে দিচ্ছে!