মধুসূদন। বড়োবউয়ের কানে মন্ত্র ফোসলাবার কেউ থাকে এটা আমি পছন্দ করি নে। আমার ঘরের বউ আমার ইচ্ছেমতো চলবে, আর-কারও পরামর্শ নিয়ে চলবে না, এই হল নিয়ম।
নবীন। সে তো ঠিক কথা।
মধুসূদন। তাই আমার ইচ্ছে মেজোবউকে দেশে পাঠিয়ে দিতে হবে।
নবীন। ভালো হল দাদা। আমি আরো ভাবছিলুম পাছে তোমার মত না হয়।
মধুসূদন। তার মানে?
নবীন। কদিন থেকে দেশে যাবার জন্যে মেজোবউ অস্থির করে তুলেছে। জিনিসপত্র সব গোছানোই আছে, এবার একটা ভালো দিন দেখলেই যাত্রা করবে।
মধুসূদন। তার মানে! এ-সব কি তাঁর নিজের ইচ্ছেতেই হবে নাকি! আর, আমি বুঝি বাড়ির কেউ নই! কেন, যাবার জন্যে এত তাড়া কিসের শুনি।
নবীন। বাড়ির গিন্নি এখন এ বাড়িতে এসেছেন। এখন এ বাড়ির সমস্ত ভার তো তাঁকেই নিতে হবে। তাই মেজোবউ বললে, আমি মাঝে থাকলে কী জানি কখন কী কথা ওঠে, তার চেয়ে মানে মানে সরে যাওয়াই ভালো।
মধুসূদন। এ-সব কথার বিচারভার কি তাঁরই উপর নাকি!
নবীন। কী করব বলো দাদা, মেয়েমানুষের বুঝ।
মধুসূদন। দেখো নবীন, মেজোবউকে আদর দিয়ে তুমিই বিগড়ে দিয়েছ। তাকে একটু কড়া করেই বলো, এখন তার যাওয়া চলবে না। তুমি পুরুষমানুষ, নিজের ঘরে তোমার শাসন চলবে না, এ আমি দেখতে পারি নে।
নবীন। চেষ্টা করে দেখব দাদা। কিন্তু —
মধুসূদন। আচ্ছা, আমার নাম করেই বলো, এখন তার যাওয়া চলবে না। যখন সময় বুঝব তখন যাবার দিন আমিই ঠিক করে দেব।
নবীন। না, তুমিই বললে কিনা, মেজোবউকে দেশে পাঠাতে হবে। তাই ভাবছি —
মধুসূদন। আমি কি বলেছি এই মুহূর্তেই পাঠিয়ে দিতে হবে? যাও যাও, ও-সব চালাকি চলবে না আমার কাছে। আমার আপিসের গাড়ি বলে দাও।
[ প্রস্থান
কুমুদিনীকে নিয়ে মোতির মার প্রবেশ
মোতির মা। এই ওঁর আপিস-ঘর।
কুমুদিনী। কোথা ওঁর ডেস্ক, কোথায় উনি চিঠি রাখেন?
মোতির মা। মাফ করো, সে আমি বলতে পারব না।
কুমুদিনী। কেন পারবে না?
মোতির মা। তোমাকে দুঃখে ফেলা হবে।
কুমুদিনী। দাদার চিঠি আমাকে দিল না তার চেয়ে দুঃখ আমাকে আর কী দেবে?
মোতির মা। আচ্ছা, তুমি তবে যাও, তোমার চিঠি আমিই নিয়ে গিয়ে দেব।