Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (http://rabindra-rachanabali.nltr.org)


যোগাযোগ-তৃতীয় অঙ্ক-প্রথম দৃশ্য, ৩৩
যোগাযোগ

মোতির মা। বলো।

কুমুদিনী। ঠাকুরকে আর আমি বিশ্বাস করতে পারছি নে। কেবলই মনে হচ্ছে, দাদা ছাড়া ত্রিভুবনে আমার আর কেউ নেই। সেই আমার দাদার জন্যে দিনরাত্রি ভাবনা। যে দেবতা জীবনের সফলতা থেকে আমাকে বিনা দোষে নিঃশেষে বঞ্চিত করতে পারলেন, আমার এই দুঃখে তাঁর কি কোনো দরদ আছে, দাদাকেই আমি এই প্রশ্ন করব।

মোতির মা। তাই কোরো।

কুমুদিনী। আমার টেলিগ্রামের জবাব এলে তখন যেন পাই বোন।

মোতির মা। আমার চেষ্টার ত্রুটি হবে না।

[ নেপথ্যে গান ]

 

 [ আজি   কোন্‌ ধন হতে বিশ্বে আমারে

কোন্‌ জনে করে বঞ্চিত,

 তব     চরণ-কমল-রতন-রেণুকা

অন্তরে আছে সঞ্চিত॥

 কত     নিঠুর কঠোর দরশে ঘরষে

মর্মমাঝারে শল্য বরষে,

  তবু প্রাণ মন পীযূষ-পরশে

পলে পলে পুলকাঞ্চিত॥

আজ     কিসের পিপাসা মিটিল না ওগো

পরম পরানবল্লভ!

চিতে     চিরসুধা করে সঞ্চার তব

সকরুণ করপল্লব!

নাথ,     যার যাহা আছে তার তা থাক্‌,

আমি থাকি চিরলাঞ্ছিত —

শুধু       তুমি এ জীবনে নয়নে নয়নে

থাকো থাকো চিরবাঞ্ছিত॥ ]