নবীনের প্রবেশ
নবীন। আমাকে একটুখানি না দেখলেই অস্থির হয়ে ওঠ, ডাকাডাকি করতে থাক, লোকে বলবে কী?
মোতির মা। রাখো তোমার রঙ্গ, কাজের কথা আছে।
নবীন। কী শুনি।
মোতির মা। বড়োঠাকুরের ঘরে তাঁর ডেস্কের উপর খোঁজ করে এসো গো, দিদির কোনো চিঠি এসেছে কি না। দেরাজ খুলেও দেখো।
নবীন। সর্বনাশ!
মোতির মা। তুমি যদি না যাও তো আমি যাব।
নবীন। এ যে ঝোপের ভিতর থেকে ভালুকের ছানা ধরতে পাঠানো।
মোতির মা। তা হোক, তোমাকে যেতে হবে।
নবীন। এখনি?
মোতির মা। হাঁ, এখনি। ওঁর কষ্ট দেখে আমার বুক ফেটে যায়। আরো একটা কাজ আছে। নুরনগরে এখনি তার করে জানতে হবে বিপ্রদাসবাবু কেমন আছেন।
নবীন। তা বেশ। তা দাদাকে জানিয়ে করতে হবে তো।
মোতির মা। না।
নবীন। মেজোবউ, তুমি তো দেখি মরিয়া হয়ে উঠেছ! এ বাড়িতে টিকটিকি পোকা ধরতে পারে না কর্তার হুকুম ছাড়া, আর আমি —
মোতির মা। দিদির নামে তার যাবে, তোমার তাতে কী?
নবীন। আমার হাত দিয়ে তো যাবে।
মোতির মা। বড়োঠাকুরের আপিসে ঢের তার তো দরোয়ানকে দিয়ে পাঠানো হয়, তার সঙ্গে এটা চালান দিয়ো। এই নাও টাকা। দিদি দিয়েছেন।
নবীন। দুর্গা দুর্গতিনাশিনী!
মোতির মা। ওই দিদি আসছেন। ওঁকে একটু হাসাতে হবে। আর কিছু না থাক্, তোমার ওই গুণটি আছে, তুমি লোক হাসাতে পার।
কুমুদিনীর প্রবেশ
নবীন। বউদি, তোমার কাছে নালিশ আছে।
কুমুদিনী। কিসের নালিশ?
নবীন। দুঃখের কথা বলি। বড়ো অত্যাচার! এই ভদ্রমহিলা আমার বই লুকিয়ে রেখেছেন।
কুমুদিনী। এমন শাসন কেন?
নবীন। ঈর্ষা। যেহেতু নিজে ইংরেজি পড়তে পারেন না। আমি স্ত্রী-শিক্ষার পক্ষে, উনি কিন্তু স্বামীজাতির এডুকেশনের বিরোধী! আমার বুদ্ধির যতই উন্নতি হচ্ছে, ওঁর বুদ্ধির সঙ্গে ততই গরমিল হয়ে যাওয়াতেই ওঁর রাগ। এত করে বোঝালাম, অত বড়ো যে সীতা তিনিও রামচন্দ্রের পিছনে পিছনেই চলতেন, বিদ্যেবুদ্ধিতে আমি তোমার [ চেয়ে ] অনেক এগিয়ে চলেছি, এতে বাধা দিয়ো না।
মোতির মা। তোমার বিদ্যের কথা মা সরস্বতী জানেন, কিন্তু বুদ্ধির বড়াই করতে এসো না।