নবীন। মেজোবউ, উপদেশ তাঁকে দেবার জন্যে আমাকে দরকার হবে না, নিজেরই হুঁশ হবে।
মোতির মা। আচ্ছা, তুমি যাও, দিদির সঙ্গে কথা আছে!
[ নবীনের প্রস্থান
দরজা খুলে
মোতির মা। ওকি দিদি, পাথরের মূর্তির মতো ধুলোয় বসে আছ! বদ্ধ ঘরে হাঁপিয়ে উঠবে — এসো, বাইরে এসো।
কুমুদিনী বাইরে এল, আঁচল মুখে চেপে ধরে কেঁদে উঠল।
কুমুদিনীর গলা জড়িয়ে ধরে
মোতির মা। দিদি আমার, লক্ষ্মী আমার, কী হয়েছে বলো আমাকে।
কুমুদিনী। আজও দাদার চিঠি পেলুম না, জানি নে কী হল তাঁর।
মোতির মা। চিঠি পাবার কি সময় হয়েছে ভাই?
কুমুদিনী। নিশ্চয় হয়েছে। আমি তাঁর অসুখ দেখে এসেছি। তিনি তো জানেন খবর পাবার জন্যে আমার মনটা কিরকম করছে।
মোতির মা। তুমি ভেবো না, খবর নেবার আমি একটা কিছু উপায় করব।
কুমুদিনী। তুমি যদি দাদাকে আমার নামে টেলিগ্রাফ করতে পার তো আমি বাঁচি।
মোতির মা। তাই করব, ভয় কী!
কুমুদিনী। তুমি জান আমার কাছে একটিও টাকা নেই।
মোতির মা। কী বল দিদি! সংসার-খরচের যে টাকা আমার কাছে থাকে সে তো তোমারই টাকা। আজ থেকে আমি যে তোমারই নিমক খাচ্ছি।
কুমুদিনী। না না না, এ বাড়ির কিছুই আমার নয়, সিকি পয়সাও নয়।
মোতির মা। আচ্ছা ভাই, তোমার জন্যে নাহয় আমার নিজের টাকা থেকেই খরচ করব। চুপ করে রইলে যে! তাতে দোষ কী? আমি যদি অহংকার করে দিতুম তুমি অহংকার করে না নিতে পারতে। ভালোবেসে যদি দিই তা হলে ভালোবেসেই নিতে হবে।
কুমুদিনী। নেব।
মোতির মা। দিদি, তোমার শোবার ঘর কি আজও শূন্য থাকবে?
কুমুদিনী। ওখানে আমার জায়গা নেই।
মোতির মা। একটু দুধ এনে দেব তোমার জন্যে?
কুমুদিনী। এখন নয়, আর-একটু পরে।
[ প্রস্থান
মোতির মা। ওগো, একবার শুনে যাও তো।