মোতির মার অন্তরালে পলায়ন
মধুসূদন। এই দেখো বড়োবউ, তোমার ঘর থেকে চুরি করে নিয়ে পালাচ্ছিল। বদমায়েস ছেলে! তোমরা যদি এরকম অসাবধান থাক তা হলে ওর স্বভাব যে মাটি হয়ে যাবে। এ রুমালটাও তো তোমার বলেই মনে হচ্ছে।
কুমুদিনী। হাঁ, আমার।
মধুসূদন। এটাও বুঝি সরিয়েছে?
কুমুদিনী। ওর ' পরে অন্যায় কোরো না, আমি ওকে দিয়েছি।
মধুসূদন। তুমি তো দানসত্র খুলে বসেছ, ফাঁকি আমারই বেলায়? এ রুমাল রইল আমারই। ওটা দিয়েই যদি ফেলবে ওটা আমিই নিলুম। মনে থাকবে কিছু পেয়েছি তোমার কাছ থেকে। কিন্তু কাগজ-চাপাটা? এটা তো চুরি বটে?
কুমুদিনী। না, ও চুরি করে নি।
মধুসূদন। আচ্ছা বেশ, তা হলে সরিয়ে নিয়েছিল।
কুমুদিনী। না, আমিই ওকে দিয়েছি।
মধুসূদন। এমনি করে ওর মাথা খেতে বসেছ বুছি। ওর লোভ বাড়িয়ে দিচ্ছ কেবল? একটা কথা মনে রেখো, আমার হুকুম ছাড়া জিনিসপত্র কাউকে দেওয়া চলবে না। আমি এলোমেলো কিছুই ভালোবাসি নে।
কুমুদিনী। তুমি নাও নি আমার নীলার আংটি?
মধুসূদন। হাঁ, নিয়েছি।
কুমুদিনী। তাতেও তোমার ওই কাঁচের গোলাটার দাম শোধ হল না?
মধুসূদন। কিন্তু আমি তো বলেইছিলুম ওটা তুমি রাখতে পারবে না।
কুমুদিনী। তোমার জিনিস তুমি রাখতে পারবে — আর আমার জিনিস আমি রাখতে পারব না?
মধুসূদন। এ বাড়িতে তোমার স্বতন্ত্র জিনিস বলে কিছু নেই।
কুমুদিনী। কিছু নেই? তবে রইল তোমার এ ঘর পড়ে।
মধুসূদন। শোনো, শোনো। তোমার হাতে ওই কাগজে মোড়া কী আছে?
কুমুদিনী। জানি নে।
মধুসূদন। জান না? তার মানে কী?
কুমুদিনী। তার মানে আমি জানি নে।
মধুসূদন। আমাকে দাও, আমি দেখি।
কুমুদিনী। ও আমার গোপন জিনিস, দেখাতে পারব না।
মধুসূদন। কী! আস্পর্ধা তো কম নয়!
জোর করে কেড়ে নিতে চারি দিকে এলাচদানা ছড়িয়ে পড়ল